নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
ফুটবল মাঠে খেলোয়াড়দের আচরণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যবহার করা হয় ‘কার্ড’ । হলুদ কিংবা লাল কার্ডের ব্যবহার ফুটবলারদের অখেলোয়াড়সুলভ আচরণ নিরুৎসাহিত করে । আবার একপক্ষ থেকে আরেকপক্ষের খেলোয়াড়দের নিরাপদ রাখতেও কার্ডের ব্যবহার অনেকটাই ‘ঢাল-স্বরূপ’ । যে কার্ড দেখাবার ক্ষমতা একমাত্র রেফারির । কার্ডসহ নানা শাস্তিমূলক বিধিনিষেধ মুলত ফুটবল ম্যাচে নিরাপত্তা আর শৃঙ্খলার ‘ঢাল’ ।
ফুটবলে লাল কার্ড মানেই কোন খেলোয়াড়ের মাঠ থেকে তৎক্ষণাৎ ‘বহিস্কার’ । সেই সাথে কমপক্ষে পরবর্তী এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা । অপরাধ বিবেচনায় নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়তেও পারে । যে কারণে মাঠে থাকা প্রতিটা খেলোয়াড় সতর্ক থাকে যাতে অন্তত কোন পরিস্থিতিতে ‘লাল কার্ড’ না দেখতে হয় । কিন্তু সেটা কি আর সব সময় হয় ? ইচ্ছা-অনিচ্ছায় রেফারি কর্তৃক খেলোয়াড়দের কার্ড দেখাবার ঘটনা খুবই স্বাভাবিক ।
ফুটবল ইতিহাসে লাল-কার্ডের প্রচলন অবশ্য খুব বেশীদিন আগের না । ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে প্রথম হলুদ আর লাল কার্ডের প্রচলন হয় । ১৯৬২ সালে চিলি-ইটালি আর ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপেে কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ড বনাম আর্জেন্টিনার ম্যাচটি কুখ্যাত হয়ে আছে নৃশংস ফাউলের জন্য । মুলত এই দুই ম্যাচের পরেই ‘ফিফা’ ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপ থেকে খেলোয়াড়দের সতর্ক করতে আর অখেলোয়াড়সুলভ আচরণের শাস্তি দিতে কার্ডের প্রচলন করে । সেবার প্রথম খেলাতেই হলুদ কার্ড পেয়েছিলেন পাঁচজন ফুটবলার, তবে পুরো বিশ্বকাপে কাউকেই লাল কার্ড দেখানো হয়নি। বিশ্বকাপে প্রথম লালকার্ড পেয়েছিলেন চিলির কার্লোস কাজেলি ১৯৭৪ সালে। আর এই পদ্ধতিতে বিশ্বকাপের বাহিরে প্রথম লালকার্ড দেখানো হয় ১৯৭৬ সালের ২ অক্টোবর। প্রথম লালকার্ড পান ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সের ডেভিড ওয়াগস্টাভ।
ফুটবল ইতিহাসে খুব কম খেলোয়াড় আছেন , যারা গোটা ক্যারিয়ারে একটি লাল কার্ড দেখেন নি । এই ক্ষেত্রে বিখ্যাত ফুটবলারদের মধ্যে ইংল্যান্ডের গ্যারি লিনেকার , ফ্রান্সের মিশেল প্লাতিনি , ইটালির আলেক্সান্দ্রো ডেল পিয়েরো , স্পেনের রাউল গঞ্জালেজ , জাভি জার্নান্দেজ , আন্দ্রে ইনিয়েস্তা , ওয়েলসের রায়ান গিগস আর জার্মানির ফিলিপ লাম গোটা ক্যারিয়ারে কখনও আল কার্ড দেখেন নি ।
এদের বিপরীতে চমকে উঠতে হয় সাবেক কলম্বিয়ান মিডফিল্ডার জেরার্ডো বেডোয়ার নাম এলেই । গোটা ক্যারিয়ারে ৪৫টি লাল কার্ড পাওয়া বেডোয়া ইতিহাসের সবচেয়ে ‘কুখ্যাত’ ফুটবলার হিসেবে পরিচিত ।
সম্প্রতি ‘বিবিসি স্পোর্টস’ এ কলম্বিয়ান সাংবাদিক কার্ল ওয়ার্সউইক বেডোয়া সম্পর্কে বলেছেন , ‘ বেডোয়া কখন কি করে বসবেন কেউ জানে না । এমনকি কোন টিভি অনুষ্ঠানে সে এলেও , সঞ্চালক বুঝি পকেটে ‘ লাল কার্ড রাখবে’ ! ‘
ফিফা’র বায়োগ্রাফিভিত্তিক ‘ফুটবল-মুন্দিয়াল’ এর একটি পর্ব করা হয়েছিল বেডোয়াকে নিয়ে । সেই ফিল্মের জন্য ওয়ার্সউইক পেয়েছিলেন বেডোয়ার সাক্ষাৎকার নেয়ার দায়িত্ব ।
সেই স্মৃতিচারণ করে ওয়ার্সউইক জানান , ‘ সাক্ষাৎকারের জন্য বেডোয়ার বাসায় যাওয়ার আগে সবাই শংকিত ছিল । যদিও সে আমাদের সাথে খুব ভাল আচরণ করেছে । উল্টো বুঝিয়েছে , খেলার মাঠ আর গ মাঠের বাইরের বেডোয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যক্তিত্ব । ‘
১৯৯৫ সালে নিজ দেশের ডেপোর্টিভো পেরেইরা দলের হয়ে সিনিয়র ক্যারিয়ার শুরু করেন বেডোয়া । আর ২০১৫ সালে অবসর নিয়েছেন কুকুতা ডেপোর্টিভো ক্লাবে শেষবার খেলে ।দক্ষিণ আমেরিকার বাইরে শুধু ২০০৫ সালে অল্প সময়ের জন্য মেক্সিকোর পুয়েবলা ক্লাবে খেলেছিলেন বেডোয়া। এছাড়া মুলত নিজ দেশ আর আর্জেন্টিনার ক্লাবেই কেটেছে তাঁর পেশাদার ফুটবল জীবন ।
২০ বছরের ক্যারিয়ারে ৪৫টি লাল কার্ড দেখেছেন বেডোয়া । এমনকি খেলা ছেড়ে সাবেক ক্লাব সান্তা ফে-র হয়ে ডাগআউটে দাঁড়ানোর পরও দুইবার লাল কার্ড দেখেছেন তিনি। এটাই প্রমাণ করে , মেজাজ কতটা চড়ে থাকে বেচারার ।
জীবনের ৪১তম লাল কার্ড দেখে পনেরো ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন বেডোয়া । প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়কে কনুই দিয়ে আঘাত করে প্রথমে ভূপাতিত করেন বেডোয়া, এরপর মাটিতে পড়ে থাকা সেই খেলোয়াড়ের মাথায় লাথিও দেন তিনি। যদিও ম্যাচ শেষে হাসিমুখে তিনি জানিয়েছিলেন , ‘ এটা স্রেফ দুর্ঘটনা । তিনি কারো ক্ষতি করার মানুষ না । ‘
মাথা গরম ক করে লাল কার্ড দেখার বিশ্বরেকর্ড গড়লেও খেলোয়াড় হিসেবে খারাপ ছিলেন না বেডোয়া । নিজ দেশ কলম্বিয়ার হয়ে ৪৯ ম্যাচে করেছেন চার গোল । কলম্বিয়ার একমাত্র আন্তর্জাতিক শিরোপা ২০০১ সালের কোপা আমেরিকা জয়ে বড় অবদান ছিল তার। সেমিফাইনালে হন্ডুরাসের বিপক্ষে বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত গোল করে দেশকে ফাইনালে পৌঁছে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ফাইনালে মেক্সিকোকে ১-০ গোলে হারিয়ে কোপা জিতে নেয় কলম্বিয়া। ৩৫ বছর পর আর্জেন্টাইন ক্লাব রেসিংকে শিরোপা জিততে সাহায্য করেছিলেন। ২০১৩ সালে কলম্বিয়ান ক্লাব সান্তা ফে-র ৩৭ বছরের শিরোপা খরা কাটাতেও অবদান রেখেছিলেন বেডোয়া।
কিন্তু সেই যে লাল কার্ডের বিড়ম্বনা, ক্যারিয়ারজুড়েই সেটি তার ইমেজকে বারবার হুমকির মুখে ফেলেছে। খেলা ছাড়ার পর সান্তা ফে-র সহকারী কোচ হিসেবে কাজ শুরুর পরও সেই কার্ডের বিড়ম্বনা পিছু ছাড়েনি তার। সহকারী ম্যানেজার হিসেবে নিজের প্রথম ম্যাচের ২১ মিনিটে লাল কার্ড দেখেন তিনি বেঞ্চে বসে ।
লাল কার্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে বেডোয়ার রেকর্ড ভাঙ্গা সহজ হবে না । বর্তমান খেলোয়াড়দের মধ্যে রিয়েল মাদ্রিদ অধিনায়ক সার্জিও র্যামস দেখেছেন ২৬ লাল কার্ড । তবে ৩৪ বছর বয়সী এই ফুটবলার বেডোয়ার রেকর্ড ছুঁতে পারবেন কিনা সেটা সময়ই বলে দেবে।
সূত্র-আহসান হাবীব সুমন/ক্রীড়ালোক
5 Comments
Alex TM
Dolorum nascetur quibusdam bibendum nesciunt torquent vehicula, nostra? Nisl? Excepteur repellat provident, laboriosam! Nullam vel.
Alex TM
Corporis quasi dicta voluptates, rerum vero eos quaerat, quo aliqua voluptates suspendisse quod tempus! Interdum.
Alex TM
Egestas molestias erat impedit blanditiis quam, proident rutrum iste? Illum? Aenean proin. Nostrum pretium, commodi.