কেএইচএন ডেস্কঃ
“সারাবিশ্বে ভৌতিক উন্মাদনার উপস্থিতি ঘটিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের ধারা বেশ শক্তিশালী। দেশি-বিদেশি অনেক খ্যাতনামা নির্মাতাও এই জনরাঁয় বিখ্যাত সব চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। ‘উন্মাদনা’ শব্দটির প্রয়োগ করার পেছনে যুক্তি হিসেবে নির্মাতা কামরুল হাসান নাসিম বলেছিলেন, ‘অন্যরা যা করছেন তা হাস্যকর ও অবুঝ চিন্তার উদ্রেকে ভাসা চিত্রনাট্য বলে অনুমিত হয়।’ ‘লিলিথ’ দেখতে বসলে শুরুর দিকে মনে হতে পারে, এটিও বোধকরি ‘হরর’ জাতীয় কিছুকে সঙ্গী করেই এগোচ্ছে। কিন্তু ধীরে ধীরে জানা যাচ্ছে, এই গ্রহের শুরু ও শেষের প্রায় সব দিক তুলে ধরা হয়েছে। ফলে এটি দেখার পর আর শুধুই একটি ফিল্ম দেখলাম— এমন উচ্চারণের জায়গায় থাকবেন না দর্শকেরা। বরং তারা ‘ঈশ্বরমিত্র’ চরিত্রকে ঘিরে আধ্যাত্মিক উচ্ছ্বাসে ভাসতে পারেন। লক্ষ্যণীয় দিক হলো— ঈশ্বরবাদী জনগোষ্ঠী শুধু নয়, তাবৎ পৃথিবীর মানুষ এই ফিল্মটির মধ্যে নতুন চিন্তার খোরাক পেতে পারেন। গল্পে দর্শন, মত ও যুক্তির যে উপস্থিতি, তা ঘিরে আলোচনা এবং অতি অবশ্যই সমালোচনাও হতে পারে।
“‘লিলিথ’ মূলত ‘ঈশ্বরমিত্র’ নামক এক বাংলাদেশি সিটিজেনের জীবন পরিক্রমাকে সাজিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র, যেখানে তিনি একজন যুবক। এই ‘ঈশ্বরমিত্রে’র সত্তায় অনেকগুলো অঙ্গন— তবে রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক জীবনে বৈশ্বিক পর্যায়ে তার লক্ষ্য কী, তা স্পষ্ট হয়নি ‘লিলিথ’ সিনেমায়। এটি আমার ব্যক্তিগত মত। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের গোয়েন্দা সংস্থা কেন তার পেছনে পড়ে রয়েছে, তাও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তবে নাড়া দিয়ে কী যেন বলতে চাইছেন! এই রহস্য ধরে রেখেই এগিয়েছে ‘লিলিথ’। গল্পে লেখক তুষার চরিত্রে আরমান পারভেজ মুরাদ খুবই ভালো অভিনয় করেছেন। ম্যাগাজিন সম্পাদক হিসেবে অপর্ণা ঘোষ ভালো করেছেন। তবে দেশি-বিদেশি শিল্পী মিলিয়ে চলচ্চিত্রটির বিষয়বস্তু খুবই অর্থবহ হয়ে উঠেছে। আর ‘ঈশ্বরমিত্র’ হয়ে কামরুল হাসান নাসিম যা দেখিয়েছেন, অনেক জাত অভিনেতাদের পক্ষেও এই চরিত্র রূপায়ন সম্ভব হবে না বলে মনে করি।”
প্রযোজক আয়শা এরিনের এমন বক্তব্য থেকেই ‘লিলিথ’ চলচ্চিত্র সম্পর্কে একটা সম্যক ধারণা পেতে পারেন বোদ্ধা মহল। তার এই মূল্যায়নের পর এই চলচ্চিত্র নিয়ে বেশি কিছু বলার থাকে না। তবে একটা প্রশ্ন থেকে যায়— ‘লিলিথ’ চলচ্চিত্রটি কাদের জন্য তৈরি? এটি মুক্তি পাবে কবে?
‘লিলিথ’ মূলত বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের বিদগ্ধ জনশ্রেণির জন্য নির্মিত সিনেমা। গল্পে স্রষ্টা, সৃষ্টি রহস্য, বিশেষ কিছু চরিত্র ও অস্তিত্বের দৃশ্যমান বাস্তবতা তুলে ধরার মাধ্যমে মানব সভ্যতার নানা দিক অঙ্কিত হয়েছে। আর এসব মিলিয়েই ‘’লিলিথ’কে ‘মুভি অব দ্য প্ল্যানেট’ বলার সাহসিকতাও দেখাচ্ছেন নির্মাতা।
‘লিলিথ’ আসছে…

গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম ঈশ্বরমিত্র, যিনি বহুমুখী প্রতিভায় ভাস্বর থাকা চরিত্র। তিনি এই ফিল্মে চিত্রশিল্পী হয়ে সামনে আসলেও মূলত লেখকি সত্তা। আধ্যাত্মিক চিন্তায় নিমগ্ন ঈশ্বরমিত্রের ধারাভাষ্য বলে দেয়, তিনি প্রতি মুহূর্তে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিশ্বময় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। ঈশ্বরমিত্র খোঁজ করছেন ঈশ্বরের। কীভাবে তা সম্ভব হবে— তা নিয়েই তার অনুসারী লেখক তুষারকে অনুপ্রাণিত করতে থাকেন, যেন লেখক তুষার তার প্রকাশিতব্য উপন্যাসে এ বিষয়ে বিস্তৃত বর্ণনায় যেতে পারেন। তুষারে স্ত্রী আলেয়া যূথী সাপ্তাহিক একটি জনপ্রিয় ম্যাগাজিনের সম্পাদক। তিনি আবার প্রতিবাদী, পুরুষতান্ত্রিক সমাজকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর। লেখক তুষারের সঙ্গে যূথীর দাম্পত্য সংকট না থাকলেও তুষারের বন্ধু ব্যবসায়ী শিশির আলোচনায় চলে আসেন। এই শিশির আবার বহুগামী এক চরিত্র। এভাবেই গল্প এগোতে থাকে। এদিকে সিআইএ, মোসাদ, র’-এর মতো সংস্থার লোকগুলো ঘিরে রাখে ঈশ্বরমিত্রকে। অন্যদিকে ঈশ্বরমিত্র সামাজিক থেকে শুরু করে বৈশ্বিক পর্যায় পর্যন্ত মানবজাতির কর্মসূচি ঘোষণা করে ঈশ্বরের সন্ধান করতে থাকেন।
‘লিলিথ’ চলচ্চিত্রের গল্পে মানব সভ্যতার অশরীরী দিক, পুরুষতান্ত্রিকতা, ভয়, জীবন-মৃত্যু, প্রতিবাদ, ষড়রিপু ও বাস্তবতা ধরা দেবে। এখানে সকলে মিলে একটি শিল্পকর্মকে তুলির আঁচড়ে ঘিরে রেখে প্রাণোচ্ছ্বল সত্তা হয়ে বলার চেষ্টায় গিয়ে অবুঝ হয়েই চিৎকার করা হয়েছে, ‘হে ঈশ্বর তোমাকে ডিঙানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে তুচ্ছ মনুষ্যপ্রাণ হিসেবে নিশ্চয়ই তুমি আমাদের তোমার আশীর্বাদে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান বিতরণ করে ঋণী করে তুলেছ।’
‘লিলিথ’ নানা দিক থেকেই আলাদা। এর রচনা, চিত্রনাট্য, পরিচালনা ও কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন কামরুল হাসান নাসিম। ১৭টি অঙ্গনে বিচরণশীল নাসিম তার এই চলচ্চিত্রটির দৃশ্যয়ান করেছেন বাংলাদেশ, ভারত, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, লেবানন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, আরব আমিরাত, ঘানাসহ ১৮টি দেশে। চলচ্চিত্রটির বহুমাত্রিক গল্পকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার প্রয়োজনে প্রায় একশ বিদেশি শিল্পীকে দিয়ে অভিনয় করানো হয়েছে। লগ্নি করানো হয়েছে বিশাল পুঁজি।
‘লিলিথ’ চলচ্চিত্রটিকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চায় এর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বৈষ্টমী। তাই বলে সব দেশের সিনেমা হলে এটি মুক্তি দিতে হবে— এমন ভাবনা নেই বৈষ্টমীর। তবে ১৫০টির মতো দেশে থিয়েটারে ‘লিলিথ’ প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে চান এর প্রযোজক আয়শা এরিন ও পরিচালক কামরুল হাসান নাসিম। সে জন্য তারা আন্তর্জাতিক পরিভ্রমণে বেরিয়েও পড়বেন খুব শিগগিরই। জার্মানি, ফ্রান্স ও আমেরিকার কোনো সিনে কমপ্লেক্সে আগামী অক্টোবরে মুক্তি দেওয়ার কথা ভাবছেন তারা। দেশে একশ বিদগ্ধজনকে ব্যক্তিগত আয়োজনে সিনেমাটি দেখানোর পরিকল্পনা আছে তাদের। এ তালিকায় প্রধানমন্ত্রীকেও রাখতে আগ্রহী তারা।
তবে সাধারণ দর্শকদের জন্যও ভিন্ন আঙ্গিকে ‘লিলিথ’ মুক্তির কথা ভাবছেন নির্মাতা কামরুল হাসান নাসিম। জানুয়ারি মাস থেকে নেটফ্লিক্স বা এরকম কোনো অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিসে ‘লিলিথ’ মুক্তির পরিকল্পনা চলছে। এছাড়া প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বৈষ্টমী’র নিজস্ব সাইট ‘চ্যানেল আয়শা’তেও ‘লিলিথ’ দেখার সুযোগ করে দিতে কাজ চলছে। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের অনেক কাছে পৌঁছে গেছেন তারা।
নির্মাতা কামরুল হাসান নাসিমের বক্তব্য
পৃথিবীতে উঁচু দরের নির্মাতারা অনেক ক্ষেত্রে তাদের ব্যক্তিজীবনে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে হয়তো সফলতায় ভাসতে পারেননি। পরে তারা সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নিজেদের নিয়োজিত করে সেখানে সাফল্য পেয়েছেন, রাজনৈতিক চিন্তক হিসেবে নিজের ছাপ রেখেছেন নির্মাণে। প্রতিবেশী দেশের সত্যজিতের ‘হীরক রাজার দেশে’ এর প্রকৃষ্ট উদাহরণও। কিন্তু সত্যজিৎ রায় একটি আঞ্চলিক শাসন ব্যবস্থা নিয়ে ভেবেছেন। অন্যদিকে ‘লিলিথে’র নির্মাতা হিসেবে বলতে পারি— এই ‘লিলিথ’ কোনো দেশ-কালে সীমাবদ্ধ নয়। এই যে পৃথিবী, আমাদের বসবাসের গ্রহ, এই গোটা পৃথিবীকে ঘিরে চিন্তার এক আবহ এবং খোদ স্রষ্টা সঙ্গে মানুষের যে সম্পর্ক— সবকিছু নিয়ে এক সক্রিয় ভাবনার মিশেল এই চলচ্চিত্র। চিন্তাশক্তির পরিপ্রেক্ষিত ঘিরে কেউ ভাবতে চাইলে এর চেয়ে বড় ভাবনার জায়গা তৈরি হয়নি।
বি .দ্রঃ ‘লিলিথ’ আসছে…- শিরোনামে সারা বাংলা অনলাইন নিউজ পোর্টালে ২ আগস্ট , ২০২০ সালে প্রকাশিত হয়।
কেএইচএন/ আএ/ ০০৩
5 Comments
Alex TM
Dolorum nascetur quibusdam bibendum nesciunt torquent vehicula, nostra? Nisl? Excepteur repellat provident, laboriosam! Nullam vel.
Alex TM
Corporis quasi dicta voluptates, rerum vero eos quaerat, quo aliqua voluptates suspendisse quod tempus! Interdum.
Alex TM
Egestas molestias erat impedit blanditiis quam, proident rutrum iste? Illum? Aenean proin. Nostrum pretium, commodi.