কেএইচএন রিসার্চ টিমঃ
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ২৪ আগস্ট হাজির হয়ে গেল কেএইচএন রিসার্চ টিম। বক্তব্য এবার, তুলে ধরা হচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশের সর্বযুগের শ্রেষ্ঠ একশত জন রাজনৈতিক নেতার নাম। এই প্রসঙ্গেই এই বছরের জুন মাসের ১ তারিখে সংস্থাটির অভিভাবক প্রতিষ্ঠান কেএইচএন সেক্রেটারিয়েট এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে বলে হয়েছিল যে,
“দেশের রাজনীতি, জনপ্রতিনিধি, শাসন রীতি, সংবিধান, জাতীয় নির্বাচন, স্থানীয় সরকার, রাজনৈতিক দল প্রভৃতি নিয়ে গবেষণারত সংস্থা কেএইচএন রিসার্চ টিম এবার জানান দিয়েছে, তাঁরা বাংলাদেশের সর্বযুগের সেরা একশত রাজনীতিকদের নাম ঘোষণা করবে।
আগস্ট মাসের ২৪ তারিখ হতে ধারাবাহিকভাবে পর্যায়ক্রমে দেশের কৃতি সন্তানদের নাম ঘোষণা করবে। চার যুগের চেয়ে একটু বেশী বয়সী স্বাধীন বাংলাদেশের বরেণ্য রাজনৈতিক বর্গের জনপ্রিয়তা, কর্মদক্ষতা ও নেতৃত্বের ওপর ফলত এই গবেষণা চলবে বলে মত রেখেছেন সংস্থাটির প্রধান গবেষণা কর্মী কামরুল হাসান নাসিম।
নাসিম বলেন, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীকে সামনে রেখে পঞ্চাশ বছরের বাংলাদেশে আমরা অভিভাবক হিসাবে যাদেরকে পেয়েছিলাম, তাঁদেরকে স্মরণ করার পাশাপাশি যারা এখনো মাটি ও মানুষের জন্য লড়ে যাচ্ছেন—- তাঁদের নামের তালিকা প্রকাশে আমরা কাজ করছি। আমরা এই একশত রাজনীতিকদের নাম শুধু নয়, তার সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত, কর্ম, ঐতিহাসিক ভুমিকা, সামাজিক রাজনৈতিক পরিচিতি তুলে ধরবার মাধ্যমে ভিন্ন ধারার সংস্কৃতির অনুশীলন করতে চাই। যেখানে যিনি ১০০ স্থান অধিকার করবেন, তিনিই দেশের সেরা একশত রাজনীতিকের শেষ প্রতিনিধি। যিনি ১ নং স্থানে থাকবেন, তিনিই গেল পঞ্চাশ বছরের শ্রেষ্ঠ রাজনীতিক হিসাবে বিবেচিত হবেন। সর্বযুগের শ্রেষ্ঠ !
তিনি বলেন, “দেশিয় রাজনীতির ওপর আমরা প্রায় আঠার বছর ধরে গবেষণা করে আসছি। বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ধরণ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, মেধা, দক্ষতা, দূরদৃষ্টি, দেশপ্রেম, সু-বক্তা হওয়া, চরিত্র, ঘটনা প্রবাহের ওপর দ্রুত সিদ্ধান্ত দেয়া, জাতীয় সংসদে ভুমিকা, টক শোতে দক্ষতা, বাচনভঙ্গি, জাতীয় রাজনীতিতে ভুমিকা, বৈশ্বিক রাজনীতির বোধ, পররাষ্ট্রনীতি, প্রতিরক্ষানীতি, সামাজিক ছদ্দাবরনে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করা— এমন নানা কিছুকে অগ্রাধিকার দিয়ে এই গবেষণা চলছে।”
নাসিম বলেছেন, “আমার নেতৃত্বে পুরোনো ও নতুন কর্মীদের নিয়ে টানা ৮০ দিন কাজ করবার পর আমরা এই তালিকা প্রকাশে মনোযোগি হব। টানা ১৮ বছর ধরে আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিক প্রেক্ষিতের ওপর গবেষণারত আছি। যা পুস্তক আকারে প্রামাণ্য গ্রন্থ প্রকাশ সহ, ওয়েব পোর্টালে পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে, তুলে ধরা হয়েছে দেশের জাতীয় দৈনিক গুলোয় গবেষণা সম্বলিত প্রতিবেদন প্রকাশের নানা দিক। এবার আমরা আমাদের অফিসিয়াল সাইটে এই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা সম্বলিত তালিকা প্রকাশে থাকবো। অতি অবশ্যই নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের যোগ্যতার ভিত্তিতেই স্থান মিলবে বলে আশা করছি। ”
কামরুল হাসান নাসিম বলেন, “জরিপ এবং গবেষণার মধ্যকার পার্থক্য রয়েছে। এমন উদ্যোগটি জরিপের মাধ্যমে নেয়া হলে শুধুমাত্র ‘জনপ্রিয়তা’ কে গ্রাস করে অর্থবহ বাস্তবতাকে মৃত করে পরিকল্পনাটিকে নিরাশ করত। কারণ, বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ এখনো মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করে না, ভাল ও মন্দ বাছতে পারার যোগ্যতায় নেই। তাঁরা সামাজিক- সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিকভাবে শিক্ষিত নন। সঙ্গত কারণেই গবেষণার মাধ্যমেই আমরা বাংলাদেশের ৫০ বছরের শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক নেতাদের মূল্যায়ন করতে চাই।
এদিকে এই গবেষণায় মোট ৪০০ জন রাজনীতিক স্থান পান। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় হতে শুরু করে ২০২০ সাল পর্যন্ত, যারা রাজনীতির জন্য অবদান রেখেছেন, তাঁদের সংক্ষিপ্ত নামের তালিকা করেই কাজটিকে অর্থবহ করবার উদ্যোগে যাওয়া হয়েছে। দেখা হয়েছে বিশেষত চারটি দিক। এক, সততা। দুই, নেতৃত্ব। তিন, দক্ষতা। চার, বিশেষ ভুমিকা।
১০০
লেঃ জেঃ মাহবুবুর রহমান
না, তিনি রাজনীতির সাথে নেই। কেন নেই ? তা নিয়ে লিখিত ধারাভাষ্যে যাওয়াই যায়। তবে তা করতে গেলে উপন্যাস রচনা করবার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। অথচ স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি একদিন রাজনীতিতে এসেছিলেন। ছিলেন সেনা প্রধান। বাংলাদেশের জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যও ছিলেন। হয়েছিলেন সংসদ সদস্যও। কিন্তু হঠাত করেই জানিয়ে দিলেন, রাজনীতিটাকে তিনি আর উপভোগ করছেন না। গেল বছরের ( ২০১৯) শেষভাগে জানান দিলেন, রাজনীতি আর করতে চান না। কিন্তু, ‘সজ্জন’ ঘরানার চারিত্রিক বিশিষ্টতার গুনাবলী নিয়ে চলতে থাকা এই ব্যক্তিটিকে শ্রদ্ধা না করার উপলক্ষ কম।
জেনারেল মাহবুব, ব্যক্তি কিংবা রাজনৈতিক জীবনে ‘জেনারেল’ এর মত করে চলতে তাঁকে দেখা যায় নাই। অতি সাধারণ হয়ে নেতা কর্মীদের সাথে চলেছেন, সত্য কথা বলবার আদর্শিক জায়গায় তিনি ছিলেন আপসহীন। প্রচলিত ধারার কূটকৌশলের রাজনীতি একজন মাহবুবকে ছুঁয়ে যেত না। তাই তাঁকে জাতীয়তাবাদী বলয়ের ‘ভদ্রলোক’ বলেই সকলে সম্মান করে গেছেন।
১৯৩৯ সালে জন্ম নেয়া মাহবুবুর রহমান ইতিহাসের অনেক কিছুর সাক্ষী। পিতা প্রয়াত কাসিম উদ্দীন আহমেদ ও মাতা লতিফা বেগমের কোলজুড়ে একদিন এই পৃথিবীতে আসেন। বিএসসি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে শিক্ষা জীবন শেষ করেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনিও একজন সৈনিক হিসাবে ছিলেন। দিনাজপুর জিলা স্কুল থেকে সে সময় সরব ছিলেন জেনারেল মাহবুবুর রহমান। গণতন্ত্রের জন্য পাকিস্তান শাসনামলে আইয়ুব খান বিরোধী আন্দোলনও করেছেন। যখন তিনি ঢাকা কলেজ এবং বুয়েটে অধ্যায়নরত ছিলেন। দিনাজপুরের জগতপুরের এই কৃতি সন্তান পল্লী অঞ্চলের মানুষগুলোকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন। দারিদ্র বিমোচন, শিক্ষা ব্যবস্থার সংষ্কার এবং যোগাযোগ খাতে পরিবর্তনের জন্য লড়তে চাইতেন। ভ্রমণ করা তাঁর শখ।
বিশেষ ভুমিকাঃ দলের অভ্যন্তরীণ সংস্কার।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন জেনারেল মাহবুব নেই। কথা বলবেন না। বনানী ডিওএইচএস এর বাসায় বই পড়ে সময় কাটে। সততার প্রশ্নে, রাজনৈতিক দল পরিচালনা করবার ইস্যুতে এবং দক্ষ একজন মানুষ হিসাবে বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা একজন রাজনীতিক হিসাবে তিনি ঠাই পেলেন। যার মধ্যে এক এগারো সরকারের সময় দলের মধ্যকার সংস্কার চেয়ে প্রমাণ করতে পেরেছিলেন, তিনি জোয়ারে নয়, ভাটার মধ্যেও ঝুঁকি নিয়ে সত্য বলতে জানেন। আবার সাম্প্রতিক সময়ে যখন তিনি বলেন, “একাদশ নির্বাচনে গিয়ে বিএনপি ভুল করেছে। যদি দলের নেতৃত্ব দিতে হয়, তারেক রহমানকে দেশে আসতে হবে। দেশে এসেই তাকে নেতৃত্ব দিতে হবে। বিদেশ থেকে দলের নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব নয়।”
তারেক রহমানকে নিয়ে তিনি কখনই আপোস করেন নি। আরেকটি উল্লেখযোগ্য পর্যায়ের সাক্ষাৎকারে তিনি একদা বলেছিলেন, ‘১/১১-এর পরে বিএনপিতে ইনিশিয়ালি আমার একটু অসুবিধা হয়েছিল। যা-ই হোক, দল আন্ডারস্টুড মাই পজিশন। দল মানে খালেদা জিয়া। তারেক স্টিল নট হ্যাপি মাই পজিশন।’
আরেকটি সাক্ষাৎকারে তারেক রহমানকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব করা প্রসঙ্গে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘গ্র্যাজুয়াল মুভ করা হলে এক জিনিস। কিন্তু একেবারে সিনিয়র জয়েন্ট সেক্রেটারি? এটা একটা ব্লানডার!’
এভাবেই সেই তারেক রহমান এখন দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান। তাহলে ধরেই নেয়া যায়, কেন জেনারেল মাহবুবুর রহমান বিএনপির মত দলে থেকে রাজনীতি করবেন ?
জেনারেল মাহবুব, তাই মন খারাপ করে , বয়সের অজুহাত দিয়ে রাজনীতি থেকে সরে গেছেন। কিন্তু, তাঁর একটা নিজস্ব আদর্শ ছিল, যা বিএনপির আপামর সমর্থকদের বোঝা সম্ভব হবে না, হবে ইতিহাসের সেই গবেষকদের, যারা সত্য লিখতে বিপ্লবী হয়ে পড়ে। তাই অন্তিম মুহূর্তে জেনারেল মাহবুব বলেছেন, ‘আমি রাজনীতি নিয়ে বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছি। বাংলাদেশে রাজনীতি নেই। এখানে কোনও আদর্শও নেই। এখানে রাজনীতির নামে একটা এক্সপ্লয়টেশন চলছে। তোষামোদ, ধাপ্পাবাজি ও মিথ্যাচারিতা চলছে।’
বিদায় নিয়েও ইতিহাসের ঠিকই তিনি অংশ হয়ে পড়লেন। লেজেন্ডারি রাজনীতিক হিসাবেই তোমাকে মনে রাখতে হবে। কারা স্মরণ করবে ? বুঝে, না বুঝে যারা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের শ্লোগান ধরে রাজনীতি করে। নানা জটিল সমীকরনে বিএনপির মধ্যকার সত্যিকারের রাজনৈতিক সুস্থতা নিয়ে আসবার জন্য যাদের চেষ্টা ছিল, সেই ধারার খুব সম্ভবত শীর্ষ নামটাই তিনি। রাজনৈতিক পাড়ার ‘ভদ্রলোক’ নামে পরিচিত—হ্যাঁ, জনাব মাহবুবুর রহমান। শ্রদ্ধা রইল কেইচএন রিসার্চ টিম এর পক্ষ থেকে। দেশের সর্বযুগের সেরা একজন রাজনীতিক হিসাবে তাঁর নাম লেখা হল।
৯৯
মোঃ রুস্তম আলী ফরাজী
পরাজয় মেনে না নেয়ার মানসিকতায় থাকা এক অদম্য সত্তার নাম ডাঃ মোঃ রুস্তম আলী ফরাজী। সংসদীয় গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় নির্বাচন আসবে, আর তিনি পিরোজপুর-৩ আসন হতে জিততে চাইবেন, এ যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম বদল করে হোক আর স্বতন্ত্র নির্বাচন করে হোক, ফরাজীকে সংসদে যেতে হবে। এমন শক্ত নিয়তে থেকে ব্যতিক্রমি এক দক্ষিণি পাড়ার রাজনৈতিক সত্তা ফরাজী। সংসদ নির্বাচনে তিনি হেরে যাবেন, তা যেন তিনি কল্পনাও করতে পারেন না। এই কল্পনা না করতে পারার দিকটিই প্রমাণ করে, তিনি নিজ এলাকায় জনপ্রিয়। তাঁর হাত ধরে খুনের আদেশ যায় না, দুর্নীতি হয় না, সে কারণেই তাঁর সৎ সত্তা মহান জাতীয় সংসদে যেয়ে কন্ঠ রাঙাতে পারে। ফরাজী যখন কথা বলে, মনে হয় হৃদয়ের ভেতর থেকে তা আসছে। তিনি মাটি ও মানুষের নেতা, তা প্রমাণিত।
ফরাজী পেশায় চিকিৎসক । রাজনীতির মধ্যে ডুবে যেয়ে দুইটি মহান পেশাকেই একসাথে চালিয়ে নিয়ে যেতে খুব বেশী পারেন নাই। ১৯৫২ সালে রুস্তম ফরাজী এই পৃথিবীতে আসেন। পিতা আব্দুল হামিদ ফরাজী ও মাতা জুলু বেগম। পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়ায় তাঁর জন্ম হয়। ছাত্রলীগ দিয়েই তাঁর রাজনীতির শুরু। ১৯৬৯ সালের গণ আন্দোলনে সক্রিয় কর্মী হিসাবে ছিলেন। আঞ্চলিক নেতৃত্ব দিতে যেয়ে আহবায়কের ভুমিকায় অবতীর্ণ হন। মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবেও পরিচিত।
বিশেষ ভুমিকাঃ জাতীয় সংসদে একাধিকবার করে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ রাখবার অভ্যাস।
এমবিবিএস করবার পর ফরাজী বিয়ে করেন। ব্যক্তি জীবনে তাঁর দুই কন্যা। তাঁর শখের মধ্যে রয়েছে বই পড়া, সমাজ সেবা এবং দেশ পরিভ্রমন।
ফরাজী ফলত আঞ্চলিক নেতা, কিন্তু বাংলাদেশ এবং রাজনীতি নিয়ে গবেষণায় মেতে উঠলে তাঁর নামকে উচ্চারণ করার পর্যায় সৃষ্টি হয়। ফরাজী আশাহত হন, যখন তিনি দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলগুলোয় আদর্শিক জায়গাগুলোর অনুশীলন হয় না বলে বারংবার করে রাজনৈতিক দল পরিবর্তন করেছেন। মহান জাতীয় সংসদে এসে তিনি জাতীয় আইন প্রণয়নে ভুমিকাও রেখেছেন বছরের পর বছর। তবে বিষয়ভিত্তিক জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষিত হয়, তেমন করে আলাদা আঙ্গিকে তাঁর কন্ঠ রঙ্গীন হয়ে না ধরা দেবার কারণেই ফরাজীকে বাংলাদেশের সব পর্যায়ের মানুষ চিনতে পারেনি, তাঁকে জানতে পারেনি। ‘জাতীয় চরিত্র’ হতে পারলে তিনি সর্বযুগের সেরা রাজনীতিক হিসাবে পঞ্চাশের মধ্যে থাকতে পারতেন বলে মনে করবার সুযোগ আছে।
চুলচেরা বিশ্লেষণ ও গবেষণার মাধ্যমে তবুও ফরাজীকে ইতিহাসের পাতা থেকে বাদ দেয়া যায় নাই। তবে শ্রেষ্ঠ শতাধিক নেতার মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন। সেক্ষেত্রে তাঁর সততা, দক্ষতা ও আঞ্চলিক নেতৃত্ব এই জায়গায় নিয়ে এসেছে। সাধারণ জীবনে থাকতে অভ্যস্ত ফরাজী বেঁচে আছেন, টিকে আছেন। রাজনৈতিক নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। একজন ফরাজীর কাছ থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধার হয়, এমন উদ্যোগ প্রত্যাশা করা যায়। সেই সঙ্গে নতুন প্রজন্মের জন্য ফরাজীর সু নির্দিষ্ট কিছু অভিনব পরিকল্পনা যদি সামনের দিনগুলোতে ধরা দেয়, ফরাজী তখন অমর হয়েই দক্ষিণা মিষ্টি বাতাস হয়ে রাজনীতির গুমট ঘরে প্রবেশ করে বলতে পারবে, ” মনে রেখো, ফরাজীও ছিল !”
৯৮
কর্নেল (অবঃ) অলি আহমেদ
জাতীয়তবাদী রাজনীতির প্রভাবশালী নেতা হিসাবে নিজেকে দেখতে স্বস্তিতে থাকেন তিনি। মানুষ তাঁকে ‘বীর বিক্রম’ হিসাবেই জানে ও মানে। কর্নেল অলি আহমেদ, ১৯৩৯ সালের ১৩ মার্চ জন্মগ্রহন করেন। রাজনীতিতে পরীক্ষামূলক অভিযানে থাকতে তাঁর মন্দ লাগে না।
রাজনৈতিক ইতিহাস যখন লিখছে, তিনি ১৯৭১ সালে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহে অংশ নেন। চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা পাঠের অন্যতম স্বাক্ষী তিনিও। প্রায় ৪৮ বছর পর সত্য হলেও হতে পারে, এবার তিনি বলছেন, “আমার অনুপ্রেরণায় জিয়া স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ওই কাজটি সেরেছিলেন। আমিই মূলত তাঁকে প্রভাবিত করেছিলাম।” শুনতে বিতর্কের গন্ধ পাওয়া যায়, তবে ইতিহাসে এমন কিছু হয়েও থাকে।
কর্নেল অলি, খানিকটা কোমল চরিত্রের, আবার নিজ স্বার্থে জেদি, রাগী— এমন কথা চাউর আছে। অলি, জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি গঠন করলে সেনাবাহিনী থেকে তার চাকুরী ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দান করেন। যদিও চাকুরীর বয়স তখন আরো নয় বছর ছিল। কিন্তু, তিনি চলে আসেন রাজনীতিতে। সেই অলিই কাকতালীয়ভাবে আজ জাতীয়তাবাদী রাজনীতির মধ্যে থেকেই নিজেই একটি ছোট্ট দলের আজন্ম সভাপতি। নাম, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি। সেই দলটিও দুইভাগে সাম্প্রতিক সময়ে বিভক্ত হয়ে গেছে। যদিও প্রথম ভাঙ্গন শুরু হয়, যখন, ২০০৬ সালের ২৬ অক্টোবর তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সাথে এই দল গঠন করেন। এ.কিউ,এম, বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সাথে মতবিরোধের পর সেখান থেকে একদিন আবার স্বভাবদুলভ কায়দায় বেরিয়েও আসেন।
দল ভাঙ্গা ও গড়ার জন্য দারুণ অভিনব সত্তা অলি আহমেদ ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে তিনি যোগাযোগ মন্ত্রী হন। যমুনা সেতুর কাজ তার সময়েই শুরু হয়। কথিত আছে, তিনি এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামেও ছিলেন। অতি সম্প্রতি তিনি জামায়াত পন্থী কিছু রাজনীতিকদের এককাট্টা করে কিছু একটা করছেন, তা প্রকাশ্যে এসেছে।
একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়েও তাঁর এমন অভিনব রাজনৈতিক উদ্যোগে সায় তেমন কারোর নেই। একান্তে আলাপচারিতায় গেলে, তাঁকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনি একজন ‘বীর বিক্রম’ হয়ে স্বাধীনতার বিরুদ্ধ শক্তির সঙ্গে মিলেমিশে কি করতে চাইছেন? উনি বলবেন, কৌশল !
এই কৌশলী হতে হতেই তিনি ইদানিং কালে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সরকারে থাকা দল বিজেপির সাথে খানিকটা সম্পর্ক তৈরি করতে পেরেছেন বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।
কর্নেল অলি, নিজের রাজনীতির জন্য পারেন না, এমন কিছু নেই। তাই এক এগারো সরকারের মেয়াদে বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বললেন, মা আর পুত্র দিয়ে বিএনপির রাজনীতি চলবে না। কখনো তিনি সত্য কথা বলবার প্রয়াসে থাকেন, আবার কখনো জুয়া খেলার মত করে নানা ধরণের মন্তব্য ছুঁড়ে প্রমাণ করতে উদ্যত হন, আমি এখনো ফুরিয়ে যাইনি।
কর্নেল অলির পিতা মরহুম আমানত ছাফা। মাতার নাম বদরুন নেসা। একাধিক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া অলির দুই পুত্র ও দুই কন্যা। করাচী থেকে স্নাতক ডিগ্রিধারী অলি পরে যুক্তরাজ্য থেকে এমফিল করেন। চাটগায়ের একসময়ের এই জনপ্রিয় নেতা চন্দনাইশ উপজেলায় জন্মগ্রহন করেন। তিনি দুইটি সংসদীয় আসনে দাঁড়িয়েও জিতবার মতো রাজনৈতিক সত্তা ছিলেন। ধীরে ধীরে তাঁর জনপ্রিয়তা কমেছে। আগের মত করে নেই। তবে আঞ্চলিক রাজনীতির গন্ডি পেরিয়ে তিনি জাতীয় রাজনীতির অভিভাবক শ্রেণির প্রতিনিধিত্বকারী চরিত্র হিসাবে এখনো নিজের মানকে টিকিয়ে রেখেছেন। তিনি জাতীয়তাবাদী রাজনীতির মুরুব্বি চরিত্র বলে অন্যান্য ঘরানার ছোট ছোট রাজনৈতিক বলয় মেনেও নেয়। তবে একরোখা, দলীয় কর্মসূচী কম থাকা এবং আদর্শিক রাজনীতি না দাঁড় করানোর ফলে কর্নেল অলি নতুন প্রজন্মের জন্য আদর্শ হয়ে থাকতে পারছেন কিনা তা নিয়ে খতিয়ে দেখার অবকাশ আছে।
বিশেষ ভুমিকাঃ স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ, স্বাক্ষী ও তাঁর মন্তব্য।
কর্নেল অলির প্রধান দুর্বলতা, আধ্যাত্মিক জগত খোঁজার নামে পীরবাদীয় সংস্কৃতিকে আদর্শিক পাথেয় ধরা। মাজারে মাজারে ঘুরতে ও পড়ে থাকতে তাঁকে দেশ ও বিদেশে দেখা যায়।
কর্নেল অলি দেশ সেবার কাজে বড়সড় পরিসরে সুযোগ পেয়েছিলেন। যোগাযোগ মন্ত্রী হিসাবে সফলও ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ঢালাও কোনো দুর্নীতির অভিযোগ ছিল না। অথচ, তাঁর সমসাময়িকেরা অবৈধ পন্থায় উপার্জন করে বিএনপির রাজনীতিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। সঙ্গত যুক্তি, বিশ্লেষণ ও গবেষণায় তাই কর্নেল অলির নেতৃত্ব ও সততা তাঁকে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে দেয়। প্রশাসনিক দক্ষতার সাথে তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতাটা আরেকটু পরিণত হলে তিনি সেরার সেরা রাজনীতিক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন বলে গবেষণা দাবী করছে। এরপরেও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বর্ণনায় তাঁর সাম্প্রতিক বক্তব্য নিয়ে বড় আঙ্গিকে গবেষণা করা গেলে তিনি বড় ধরণের রাজনৈতিক সত্তা হিসাবে পুনরায় আবির্ভূত হতে পারেন—- যেখানে তিনি বলছেন, আমি অলি না থাকলে, জিয়া ওইদিন স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করবার পর্যায়ে যেতে পারতো না !
কর্নেল অলি, সর্বকালের যুগশ্রেষ্ঠ সেরা ১০০’র মধ্যে আছেন ৯৮ নম্বরে। যেখানে রিসার্চ টিম বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের জাতীয় পর্যায়ের ৪০০ জন বনেদী রাজনীতিকবর্গ নিয়ে কাজ করছে।
৯৭
জি এম কাদের
গোলাম মোহাম্মদ কাদের, বাংলাদেশ তাঁকে চেনে জি এম কাদের নামেই। অসম্ভব পর্যায়ের ভদ্রলোক হিসাবে তাঁর সুনাম রয়েছে। অনেকে তাঁকে রাজনীতিক হিসাবে দেখতেই স্বস্তিতে থাকেন না। কারণ, তাঁরা মনে করে, রাজনীতির এত কূটকৌশল কি জনাব কাদের সামলিয়ে এগোতে পারবে ? কিন্তু, দেখতে দেখতে জনাব জি এম কাদের চারবারের সংসদ সদস্য। হাসিনা সরকার তথা মহাজোট সরকারের মেয়াদে মন্ত্রিত্বও করেছেন। আর এখন ? রাজনৈতিক ঐতিহাসিকতায় তাঁর বড় ভাই দেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান তিনিই।
জি এম কাদের, ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম মকবুল হোসেন ও মাতার নাম মজিদা খাতুন। শিক্ষাজীবনে কাদের মেকানিক্যালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষাজীবন শেষে তিনি নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডে মেকানিক্যাল প্রকৌশলী হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ টোবাকো কোম্পানি, ইরাকের কৃষি মন্ত্রণালয় ও যমুনা তেল কোম্পানি, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়ামে পরিচালক পদে চাকুরী করেন। এভাবেই একদিন চাকুরী থেকে পদত্যাগ করে রাজনীতিতে যুক্ত হন।
সাদামাটা জীবন থেকে পুরোদস্তুর রাজনীতিতে এসে মূলত লালমনিরহাট ও রংপুর-৩ থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনাব কাদের অংশ নিয়ে থাকেন। উত্তর বঙ্গের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির দুর্গ থাকায় তাঁকে নিরাশ হতেও হচ্ছে না। প্রতিবারই জেতার অভ্যাসে আছেন। জি এম কাদের, বড় ভাই হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের ছায়ায় এতটা দিন পার করতে পারলেও দেশের তৃতীয় জনপ্রিয় দলের প্রধান নেতা হিসাবে দায়িত্ব এখন তাঁর অনেক। দায়িত্বও ঠিক নয়, গবেষণা দাবী করছে, চ্যালেঞ্জ ! হ্যাঁ, অনেক চ্যালেঞ্জ।
সাধারণত পৃথিবীর সব প্রান্তেই বিখ্যাত কিংবা আলোচিত কোনো ব্যক্তি সত্তা যখন দুনিয়া ছেড়ে দেন, তখন তাঁর প্রতি মানুষের আবেগ, মায়া জন্ম নেয়। একজন হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের এমনিতেই জনপ্রিয়তা ছিল, উপরন্ত তিনি এখন আর নেই। পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেছেন। স্বভাবতই এই দেশের জনগণের বড় একটা অংশ মনে করে, এরশাদের কর্মময় জীবন, আধুনিকচেতা মন, উন্নয়ন করবার অভিপ্রায়— তাঁকেও একদিন মহান জাতীয় নেতা হিসাবে পরিচিত করাবে। কিন্তু, তাঁকে স্মরনে রাখবার জন্য পারিবারিক আবেগ বড় হয়ে দাঁড়াবে না, বড় হবে নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে দেশের একাংশের কাছে পল্লীবন্ধু হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদকে বাঁচিয়ে রাখতে পারলে। সেই চ্যালেঞ্জ একজন জি এম কাদের নিতে পারবেন কিনা ! এমনিতেই এরশাদ পত্নী রওশন এরশাদ, ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদদের মত ব্যক্তিসত্তার হাতে রাজনৈতিক খড়গ আছে, কাজেই কাদেরের তা মোকাবেলা করেই জাতীয় পার্টিকে স্বীয় আসনে ধরে রাখার যেমন নেতৃত্ব প্রদর্শন করতে হবে, আবার নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে, বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রথম আধুনিক স্বপ্নবাজ চরিত্র ছিলেন হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ।
জি এম কাদের তাই দায়িত্ব নেয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়েই দেশের সর্বযুগের সেরা রাজনীতিকদের তালিকায় ঢুকে পড়েছেন। হ্যাঁ, তাঁর মাঝে সততা আছে, দক্ষতাও আছে কিন্তু নেতৃত্ব ততটা পরীক্ষিত নয়। এখন সেই পরীক্ষায় পাশ করতে পারলে, ইতিহাসের প্রামাণ্য চিত্রে তিনি হিরো হয়ে অধিকতর সফল হয়ে যাবেন। এখনো হিরো, কারণ, জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব পেয়েছেন। এটি তাঁর অর্জন।
রাজনৈতিক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, জাতীয় পার্টি দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় রয়েছে প্রায় ২১ বছর। অনেকেই বলবেন, ৯ বছর। না, গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে, হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় স্বৈরাচারী হয়ে নয় বছর থাকলেও এক এগারো সরকারের পর হতে পুনরায় বাংলাদেশ সংসদীয় গণতন্ত্রের রাস্তায় রওনা করলে, জাতীয় পার্টিও ২০০৯ সাল হতে এখনো অব্দি অংশীদারিত্বের খেলায় টিকে থেকে সরকারের মধ্যেই আছে। যা এরশাদের দূরদৃষ্টি রাজনীতির পরিচয় বলে বিধৃত হয়।
বিশেষ ভুমিকাঃ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হওয়ার লড়াইয়ে সফল হওয়া।
জি এম কাদের বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এখন একজন আলোচিত সত্তা। যার মধ্যে রাজনৈতিক শিষ্টাচার রয়েছে, রয়েছে জাতীয় রাজনীতি করবার মত যোগ্যতা। কথায় আছে, ওল্ড ইজ গোল্ড । কিন্তু, কাদের পুরোনো না হয়েও কিংবদন্তী হয়েই লড়ছেন, লড়বেন। পাহাড়সম দায়িত্ব নেয়ার পরেই তিনি সর্বযুগের সেরার তালিকায় এখন এক ‘যুগজয়ী’ নাম।
৯৬
আমির হোসেন আমু
তিনি একজন সত্যিকারের নেতা। সাংগঠনিক দক্ষতা তাঁর চরিত্রের প্রধান শক্তি। বয়স বেড়েছে। কিন্তু, হারতে চায় না মন। সেই মন তাঁকে বারংবার করে নতুন নতুন ইতিহাসের সঙ্গী করায়। বরিশাল অঞ্চলের এই নেতাকে জাতীয় নেতা হতে বেগ পেতে হয় নাই। আমু মানেই আওয়ামী লীগ, তাঁর অগনিত কর্মীরা সেভাবেই উচ্চারণ করে বলতে থাকে, তিনিই রাজনীতির আসল মিয়াভাই !
জনাব আমির হোসেন আমু ১৯৪০ সালের ১লা জানুয়ারি তদানীন্তন বরিশাল জেলার ঝালকাঠী মহকুমায় জন্মগ্রহণ করেন। যে ঝালকাঠি এখন একটি জেলা। তার পিতা মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন এবং মাতা আকলিমা খাতুন। ছেলেবেলায় সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির সাথে ছিলেন। ১৯৬৪ সালে তিনি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৫ সালে আমু ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালের প্রাদশিক পরিষদ নির্বাচনে তিনি বরিশাল সদর আসন থেকে জয়লাভ করেন। ১৯৭২ সালে আমু যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসাবে মনোনীত হন। ১৯৭৮-১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি যুবলীগের চেয়ারম্যান ছিলেন। সে সময়টাতেই তিনি আশীর্বাদ দিয়ে দেন হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গদের। যার সুবাদে সারা দেশে যুবলীগ অত্যন্ত শক্তিশালী একটা অঙ্গসংগঠন হিসাবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করে।
রাজনৈতিক এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে, ১৯৭৫ সালের অমানিশা রাত ১৫ আগস্টের পর রাজপথে যুবলীগের নেতৃত্বে বিশেষত আওরংগ, লিয়াকতেরা মুজিব হত্যার বদলা চাই বলে ক্ষণে ক্ষণে যে সকল ঝটিকা মিছিল বের করত, তাঁর নেপথ্য শক্তি ছিলেন এই আমির হোসেন আমু। অর্থাৎ প্রতিকুল পরিবেশের মধ্যেও আমুর রাজনৈতিক মিশন অব্যাহত ছিল।
এদিকে আমির হোসেন আমু ১৯৬৫ সালে বরিশাল বিএম কলেজ থেকে বিএ এবং ১৯৬৮ সালে বরিশাল আইন মহাবিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭০ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর আইন পেশায় নিয়োজিত হন।
২০০৬-০৮ সাল পর্যন্ত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শেখ হাসিনা যখন বন্দী ছিলেন, তখন যে কয়জন নেতা দলের নেতৃত্বে ছিলেন আমু তাদের মধ্যে একজন। তাঁকে সংস্কারবাদী বলবার চেষ্টা করা হলেও তা প্রমাণিত সত্য বলে পরবর্তীতে বিবেচিত হয় নাই। ফলশ্রতিতে ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং বাংলাদেশ সরকারের শিল্পমন্ত্রী হন।
আমির হোসেন আমু দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় একজন সংগ্রামী চরিত্র হিসাবে নিজের জাতকে চিনিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসে নাই। অথচ, তিনি বড়সড় দায়িত্ব নিয়েছিলেন। দক্ষ প্রশাসক হিসাবে তাঁর খ্যাতি রয়েছে। নেতৃত্বের গুনাবলী রয়েছে তাঁর মাঝে। জ্যেষ্ঠতা, ক্লিন ইমেজ, সাহসীকতা, কার্যকরী বক্তব্য রাখা ছাড়া সংবাদ মাধ্যমে না আসা— সব কিছু তাঁকে লেজেন্ডারি রাজনৈতিক সত্তা হিসাবে জায়গা করে দেয়। রিসার্চ টিম কাজ করতে যেয়ে দেখেছে, আমির হোসেন আমু এখনো দক্ষিণ অঞ্চলসহ সারাদেশের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বড় একটা অংশের কাছে আদৃত নাম ও অহংকার। তাঁকে ইতিহাসের পাতায় রাখতে তাই কার্পণ্য কোথায় ! পয়েন্ট বা স্কোর করে তিনি জানান দিচ্ছেন, আমিও ইতিহাসের অন্যতম সেরা রাজনীতিক।
সুপ্রিয় পাঠক,
বাংলাদেশের সর্বযুগের সেরা রাজনীতিকদের তালিকা( ১০০) প্রকাশে কেএইচএন রিসার্চ টিম কাজ করে যাচ্ছে। পরবর্তী প্রতিবেদনে ৯৫ হতে ৯১ নং তালিকায় যারা থাকছেন, তা প্রকাশ করা হবে। সে পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকুন।
আপনাদের মতামত এবং জায়গা পাওয়া কারো সম্পর্কে তথ্য দিতে চাইলে নিম্নলিখিত ই মেইলে পাঠান।
কে/৭১৭/গ-০০১
5 Comments
Alex TM
Dolorum nascetur quibusdam bibendum nesciunt torquent vehicula, nostra? Nisl? Excepteur repellat provident, laboriosam! Nullam vel.
Alex TM
Corporis quasi dicta voluptates, rerum vero eos quaerat, quo aliqua voluptates suspendisse quod tempus! Interdum.
Alex TM
Egestas molestias erat impedit blanditiis quam, proident rutrum iste? Illum? Aenean proin. Nostrum pretium, commodi.