Blog

Congue iure curabitur incididunt consequat

সর্বযুগের সেরা একশত রাজনীতিক

কেএইচএন রিসার্চ টিমঃ 

 

“দেশের রাজনীতি, জনপ্রতিনিধি, শাসন রীতি, সংবিধান, জাতীয় নির্বাচন, স্থানীয় সরকার, রাজনৈতিক দল প্রভৃতি নিয়ে গবেষণারত সংস্থা কেএইচএন রিসার্চ টিম এবার জানান দিয়েছে, তাঁরা বাংলাদেশের সর্বযুগের সেরা একশত রাজনীতিকদের নাম ঘোষণা করবে।

আগস্ট মাসের ২৪ তারিখ হতে ধারাবাহিকভাবে পর্যায়ক্রমে দেশের কৃতি সন্তানদের নাম ঘোষণা করা হচ্ছে। চার যুগের চেয়ে একটু বেশী বয়সী স্বাধীন বাংলাদেশের বরেণ্য রাজনৈতিক বর্গের জনপ্রিয়তা, কর্মদক্ষতা  ও নেতৃত্বের ওপর ফলত এই গবেষণা চলবে বলে মত রেখেছেন সংস্থাটির প্রধান গবেষণা কর্মী কামরুল হাসান নাসিম

নাসিম বলেন, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীকে সামনে রেখে পঞ্চাশ বছরের বাংলাদেশে আমরা অভিভাবক হিসাবে যাদেরকে পেয়েছিলাম, তাঁদেরকে স্মরণ করার পাশাপাশি যারা এখনো মাটি ও মানুষের জন্য লড়ে যাচ্ছেন—- তাঁদের নামের তালিকা প্রকাশে আমরা কাজ করছি। আমরা এই একশত রাজনীতিকদের নাম শুধু নয়, তার সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত, কর্ম, ঐতিহাসিক ভুমিকা, সামাজিক রাজনৈতিক পরিচিতি তুলে ধরবার মাধ্যমে ভিন্ন ধারার সংস্কৃতির অনুশীলন করতে চাই। যেখানে যিনি ১০০ স্থান অধিকার করবেন, তিনিই দেশের সেরা একশত রাজনীতিকের শেষ প্রতিনিধি। যিনি ১ নং স্থানে থাকবেন, তিনিই গেল পঞ্চাশ বছরের শ্রেষ্ঠ রাজনীতিক হিসাবে বিবেচিত হবেন।  সর্বযুগের শ্রেষ্ঠ !

তিনি বলেন, “দেশিয় রাজনীতির ওপর আমরা প্রায় আঠার বছর ধরে গবেষণা করে আসছি। বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ধরণ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, মেধা, দক্ষতা, দূরদৃষ্টি, দেশপ্রেম, সু-বক্তা হওয়া, চরিত্র, ঘটনা প্রবাহের ওপর দ্রুত সিদ্ধান্ত দেয়া, জাতীয় সংসদে ভুমিকা, টক শোতে দক্ষতা, বাচনভঙ্গি, জাতীয় রাজনীতিতে ভুমিকা, বৈশ্বিক রাজনীতির বোধ, পররাষ্ট্রনীতি, প্রতিরক্ষানীতি, সামাজিক ছদ্দাবরনে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করা— এমন নানা কিছুকে অগ্রাধিকার দিয়ে এই গবেষণা চলছে।”

নাসিম বলেছেন, “আমার নেতৃত্বে পুরোনো ও নতুন কর্মীদের নিয়ে টানা ৮০ দিন কাজ করবার পর আমরা এই তালিকা প্রকাশে মনোযোগি থাকছি।   টানা ১৮ বছর ধরে আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিক প্রেক্ষিতের ওপর গবেষণারত আছি। যা পুস্তক আকারে প্রামাণ্য গ্রন্থ প্রকাশ সহ, ওয়েব পোর্টালে পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে, তুলে ধরা হয়েছে দেশের জাতীয় দৈনিক গুলোয় গবেষণা সম্বলিত প্রতিবেদন প্রকাশের নানা দিক।  এবার আমরা আমাদের অফিসিয়াল সাইটে এই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা সম্বলিত তালিকা প্রকাশে থাকবো। অতি অবশ্যই নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের যোগ্যতার ভিত্তিতেই স্থান মিলবে বলে আশা করছি। ”

কামরুল হাসান নাসিম বলেন, “জরিপ এবং গবেষণার মধ্যকার পার্থক্য রয়েছে। এমন উদ্যোগটি জরিপের মাধ্যমে নেয়া হলে শুধুমাত্র ‘জনপ্রিয়তা’ কে গ্রাস করে অর্থবহ বাস্তবতাকে মৃত করে পরিকল্পনাটিকে নিরাশ করত। কারণ, বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ এখনো মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করে না, ভাল ও মন্দ বাছতে পারার যোগ্যতায় নেই। তাঁরা সামাজিক- সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিকভাবে শিক্ষিত নন।  সঙ্গত কারণেই গবেষণার মাধ্যমেই আমরা বাংলাদেশের ৫০ বছরের শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক নেতাদের মূল্যায়ন করতে চাই।

 

এদিকে এই গবেষণায় মোট ৪০০ জন রাজনীতিক স্থান পান। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় হতে শুরু করে ২০২০ সাল পর্যন্ত, যারা রাজনীতির জন্য অবদান রেখেছেন, তাঁদের সংক্ষিপ্ত নামের তালিকা করেই কাজটিকে অর্থবহ করবার উদ্যোগে যাওয়া হয়েছে। দেখা হয়েছে বিশেষত চারটি দিক। এক, সততা। দুই, নেতৃত্ব। তিন, দক্ষতা। চার, বিশেষ ভুমিকা। 

গেল ২৪ আগস্ট প্রথম প্রতিবেদনে প্রকাশিত তালিকায় যারা স্থান নিয়েছিলেন তাঁরা হলেন, 

 

১০০ 

লেঃ জেঃ মাহবুবুর রহমান 

৯৯

রুস্তম আলী ফরাজী 

৯৮

কর্নেল অলি আহমেদ 

৯৭

জি এম কাদের 

৯৬

আমির হোসেন আমু 

 

পূর্ববর্তী প্রতিবেদনটি পড়তে নীচের লিংক-এ ক্লিক করুন। 

সর্বযুগের সেরা একশত রাজনীতিক ( প্রথম ধাপ)

 

বাংলাদেশের সর্বযুগের সেরা রাজনীতিকদের তালিকায় যারা ৯৫, ৯৪,৯৩,৯২ ও ৯১ স্থানে জায়গা করে নিলেন, চলুন সে সকল সম্মানিত রাজনীতিক বর্গ সম্যক জেনে নেয়া যাকঃ 

 

৯৫

হান্নান শাহ 

 

তিনি মূলধারার রাজনীতিতে থেকেও বিপ্লবী চরিত্রের ছিলেন। যেটা ভাল মনে হয়, সেটা করেই আলোচিত হতেন। সাহসী ও দক্ষ সংগঠক ছিলেন।  তিনি যান্ত্রিক জীবনের পথচলায় এক পশলা বৃষ্টির মত করে আসতেন। নৈতিকতা বিরুদ্ধ রাজনীতিতে তাঁর অংশগ্রহণ থাকত না। সাফ কথা বলার এমন ব্যতিক্রমী রাজনৈতিক চরিত্র, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করে। সঙ্গত কারণেই তিনি ইতিহাসের অংশ হয়ে পড়লেন।

 

১১ অক্টোবর ১৯৪১ সাল,  গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঘাগটিয়া ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন হান্নান শাহ। তার বাবার নাম ফকির আবদুল মান্নান শাহ। তাঁর বাবা ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। হান্নান শাহ এর স্ত্রীর নাম নাহিদ হান্নান। তাদের এক মেয়ে শারমিন হান্নান ‍সুমি এবং দুই ছেলে শাহ রেজাউল হান্নান ও শাহ রিয়াজুল হান্নান।জনাব হান্নান শাহ মৃত্যুবরণ করেন ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর।

১৯৬২ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন পাওয়া হান্নান শাহ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে অন‌্য বাঙালি সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন। ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে ফিরে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। এইচ এম এরশাদ সরকারের সময় তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যান। সেনাবাহিনী থেকে অবসরের পর এরশাদ সরকারের সময়ে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছিলেন হান্নান শাহ। ১৯৮৩ সালে ওই পদ ছেড়ে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। বিএনপিতে যোগদানের শুরুতে তিনি ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) হিসেবে ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস‌্য হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

হান্নান শাহ ১৯৯১ সালের নির্বাচনে গাজীপুর-৪ আসন (কাপাসিয়া) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯১ সালের বাংলাদেশ সরকারের পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হলে তাকে বিএনপি’র সবোর্চ্চ ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য করা হয়।মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাঁর এই পদ দলে বহাল ছিল।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির দুঃসময়ের কান্ডারি হিসাবে তাঁকে দেখার সুযোগ আছে। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত সরকারের আবির্ভাব হলে তিনি বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের প্রায় সবাইকে ছাপিয়ে যেয়ে নিজের  মধ্যে থাকা লুকায়িত নেতৃত্বকে দেখিয়ে দেন। তিনি প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অদম্য হতে হবে। রাজনীতিকে বিরাজনীতিকরণের উদ্যোগকে নস্যাৎ করতে হবে, নিজ দলকে বাঁচাতে হবে। হান্নান শাহ্‌ তাই মহান মুক্তিযুদ্ধে বড়সড় ভুমিকা না রাখতে পারলেও স্বাধীনতা পরবর্তী সংসদীয় গণতন্ত্রের অব্যাহত অভিযাত্রাকে টিকিয়ে রাখতে একজন জাতীয় নেতা হিসাবে আবির্ভূত হন। ১৯৯১ সালের মেয়াদে নিজের দলের সরকারে যাওয়া, তাঁর মন্ত্রিত্ব গ্রহণ— এসব কিছুকে ছাপিয়ে যায়  ১/১১ সরকারের মেয়াদে তাঁর রাজনৈতিক ভুমিকা। 

হান্নান শাহের শক্ত মনোবল, অন্যায়ের সাথে আপস  না করা, তাবেদারী রাজনীতির প্রতিনিধি না হওয়া এবং দলীয় মুখপাত্র হওয়ার সকল গুন থাকবার সুবাদে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক ব্যতিক্রমি রাজনীতিক হিসাবে তাঁর জায়গা হয়ে যায়। যেখানে তাঁর চরিত্রে সততা, নেতৃত্ব ও দেশপ্রেম প্রতিভাত হয় এবং তিনিও ইতিহাস সেরা রাজনীতিক হিসাবেই বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় থেকে যাবেন বলে ‘গবেষণা’ দাবী করছে।

 

 

৯৪ 

মোহাম্মদ নাসিম 

 

বৈশ্বিক মহামারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি  পৃথিবী ছেড়েছেন ২০২০ সালে। বাংলাদেশকে দেয়ার মত তাঁর আরো অনেক কিছুই ছিল। দেশিয় রাজনীতির জটিল সমীকরণে ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র হয়ে জাতীয় রাজনীতি করছিলেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে নিজ দল আওয়ামী লীগ এলেও সেবার আর মন্ত্রীসভায় জায়গা মেলেনি। কিন্তু, তিনি ১৯৯৬ সালে স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হবার পর তিনি পুনরায় মন্ত্রী হন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হলেন।  সেই স্বাস্থ্য খারাপ হল ২০২০ সালে এসে। চলে গেলেন অগনিত অনুসারী রেখে।

ব্যক্তি জীবনে মোহাম্মদ নাসিম  বিবাহিত এবং তিন সন্তানের জনক ছিলেন। তার স্ত্রীর নাম লায়লা আরজুমান্দ। পুত্র তানভীর শাকিল জয় রাজনীতির সাথে আছেন। জনাব নাসিমের  পিতা মনসুর আলী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী, স্বাধীন বাংলাদেশের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ভাই ডক্টর সেলিমও বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনীতির অন্যতম ব্যক্তিত্ব। 

মোহাম্মদ নাসিম পাবনার এডওয়ার্ড কলেজে পড়াশোনা করেন। তিনি ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন। ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা আন্দোলনের এক সমাবেশে অংশ নিতে পাবনায় যান এবং পরে তিনি মনসুর আলীর বাড়িতে যান, যেখানে তিনি জানতে পারেন যে নাসিম ছাত্র ইউনিয়নের নেতা। শেখ মুজিবুর রহমানের অনুরোধে নাসিম আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের একটি অনুষ্ঠানে হাজির হন এবং পরবর্তীকালে এই সংগঠনে যোগ দেন। ১৯৬৭ সালে, নাসিম এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন নির্বাচনে নির্বাচিত হন। এডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাশের পর তিনি ঢাকায় এসে জগন্নাথ কলেজে  (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হন ও এখান থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।[ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় নাসিম মুজিবনগর সরকারের পক্ষে কাজ করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর নাসিম আওয়ামী লীগের পাবনা জেলা শাখার যুগ্মসচিব হন। ১৯৭৩ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তাকে পরে আওয়ামী লীগের যুব শাখা বাংলাদেশ যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়। ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠনের পরে তাকে এর সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত করা হয়। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের অযাচিত হত্যাকাণ্ডেরপর মোহাম্মদ নাসিমকেও গ্রেপ্তার করা হয়। সেইসময় দীর্ঘদিন তাকে কারাগারে থাকতে হয়।

 

১৯৮১ সালের আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতি থেকে জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন নাসিম। ওই সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুব সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮২ সালে নাসিমকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালের সম্মেলনে দলের প্রচার সম্পাদক মনোনীত হন। ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালের সম্মেলনে তিনি দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০২ সালের আগ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ একটি ছিল। এরপর থেকে বিভাগভিত্তিক সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০০২ ও ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত দলের সম্মেলনে তাকে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির এক নম্বর সদস্য পদে রাখা হয়। ২০১২ সালের সম্মেলনে তাকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। পরপর তিন মেয়াদে তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন।

 

মোহাম্মদ নাসিম মোট ৬ বার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। আঞ্চলিক রাজনীতিতে তাঁর একচ্ছত্র প্রভাব ছিল। জাতীয় রাজনীতিতে তিনি ছিলেন অবিসংবাদিত ‘কন্ঠ’। গণতন্ত্রের জন্য লড়াইকরত তিনি রাজপথে নেতৃত্ব দিতে পছন্দ করতেন।   গবেষণায় দেখা যায়, নিজ এলাকা এবং জাতীয় পর্যায়ে, তথা উভয় ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে খুব বেশি নেতা সফল ছিলেন না। মোহাম্মদ নাসিম ছিলেন তেমন নজিরবিহীন উদাহরণের চরিত্র। উপরন্ত জাতীয় নির্বাচনে দলের কৌশল এবং জোট সংস্কৃতির রাজনীতির নেতৃত্বও তাঁর কাছে ছিল।  তিনি ১৯৯৬ সালের সরকারের মেয়াদে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী হিসাবে দক্ষিণ পশ্চিমবঙ্গের সন্ত্রাস নিধনে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করেন। আওয়ামী লীগের বলিষ্ঠ রাজনৈতিক কন্ঠ হিসাবে তিনি বিরোধী দলকে মোকাবেলা করবার দারুণ এক নেতা ছিলেন। জাতীয় সংসদে যেতে অভ্যস্ত এই নেতার তুখোড় সাংসদ হওয়ার ইতিহাস রয়েছে। তিনি যখন মাইক নিয়ে ফ্লোর নিতেন, তখন অপরাপর সাংসদদের সংসদে বসে আর তন্দ্রায় যাওয়ার সুযোগ থাকতো না। তিনি যুগজয়ী বক্তব্য রেখেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির অন্যতম নেতা হিসাবে নিজের জাতকে চেনাতেন।   

 

 

৯৩

মিজানুর রহমান চৌধুরী

 

 

ধীরে কথা বলবার অভ্যাস এবং দক্ষতা, তাঁকে সব সময় আলাদা করে রাখতো। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে রাজনৈতিক ইতিহাসও গড়েছিলেন। আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগ—- ঠিকই তিনি ঘরে ফিরে এসে বলেছিলেন, বিদায় হে বসুন্ধরা !

২ ফেব্রুয়ারী, ২০০৬— মিজান চৌধুরী গ্রহান্তরীত হন। কিন্তু, তাঁর মৃত্যুর ১৪ বছর পরে বাংলাদেশের যুগশ্রেষ্ঠ রাজনীতিকদের তালিকা প্রণয়নে ‘গবেষণা’ প্রস্তুত করতে যেয়ে দেখা যাচ্ছে, তিনিও ইতিহাসের সেরা একজন রাজনীতিকই।

মিজানুর রহমান চৌধুরী ১৯২৮ সালের ১৯ অক্টোবর চাঁদপুর জেলার পুরাণবাজারস্থ পূর্ব শ্রীরামদী গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম মোঃ হাফিজ চৌধুরী এবং মাতা মরহুমা মোসাম্মৎ মাহমুদা বেগম।

জনাব মিজান কলেজ থেকেই তিনি ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৬২ সালে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬২ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য ছিলেন। যখন শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ কারাগারে ছিলেন তখন তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি নিজেও গ্রেফতার হন। আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় তিনি সম্মিলিত বিরোধী দলের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

 

প্রয়াত মিজান ’৭০ এর নির্বাচনে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য হন। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ এর সংসদে তিনি সংসদ সদস্য ছিলেন। ১৯৭৩ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রী সভায় তিনি তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিব নিহত হলে বাকশাল সরকারের পতন হয় এবং জিয়াউর রহমান সরকার বহুদলীয় রাজনীতির অনুমোদন দিলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত হয় এবং আবদুল মালেক উকিল এবং মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের দু’টি পৃথক ধারার সৃষ্টি হয়।

 

আশির দশকের শুরু দিকে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সামরিক সরকারকে সমর্থন দেন এবং জাতীয় পার্টিতে (সেসময়ের নাম জাতীয় দল)যোগ দেন (১৯৮৪)। ১৯৮৬ তে প্রধানমন্ত্রী হন। এরশাদের রাষ্ট্রপতি থাকা কালীন তিনি দুই বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। মার্চ, ১৯৮৮ তে মওদুদ আহমেদ তার স্থলে প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৯০ সালে এরশাদ ক্ষমতা ছেড়ে দেন। ১৯৯০ তে এরশাদ সরকার পতনের পর এরশাদ জেলে থাকাকালীন তিনি জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে মিজানুর রহমান আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা হিসাবে ছিলেন।

 

মিজানুর রহমান চৌধুরী, ফলত মিজান চৌধুরী হয়ে পড়েন, যখন তিনি এরশাদ সরকারের প্রভাবশালী রাজনৈতিক চরিত্র হয়ে পড়েন। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং বড় ধরণের কোনো অনৈতিক পর্যায়ের অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে কেহই গঠন করতে পারেনি। নিজের ইমেজকে ধরে রাখার মধ্য দিয়ে তিনি একজন সফল রাজনীতিক হিসাবেই বাংলাদেশে ছিলেন, আছেন ও থাকবেন বলে মনে করবার সুযোগ আছে। ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের দুঃসময় এবং জাতীয় পার্টির সুসময়- দুঃসময়েও অবিচল থেকে ঠান্ডা মাথায় নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। নেতৃত্বের অন্যতম একটি দিক হল, ঘটনা প্রবাহের সঙ্গে দ্রুত সিদ্ধান্ত দেয়া, একজন মিজান চৌধুরীর মাঝে এই গুন ছিল, যা তাঁকে ইতিহাসের পাতায় বন্দী করে বলে, ভাল থেকো নেতা !

 

 

৯২

এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী

 

নেতা হতে হলে যা যা থাকা দরকার, তা তাঁর মধ্যে ছিল। হয়তো ইতিহাসের পাতায় তিনিও আঞ্চলিক রাজনীতির শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধিত্ব। কিন্তু, মহিউদ্দীন চৌধুরীকে চিনতে হয়েছে। কাদের ? বাংলাদেশের মানুষকে। তা তাঁর কর্ম, বক্তব্য ও সাংগঠনিক দক্ষতা সব সময় বলেছে, তিনি স্পেশাল ওয়ান !

এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী, দেশ স্বাধীনতার পর থেকে মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৯৩ সাল থেকে ২০০৯ পর্যন্ত কয়েক দফায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগর ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামের নগর মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর জন্ম চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামে বক্স আলী চৌধুরী বাড়িতে। তাঁর বাবা রেল কর্মকর্তা হোসেন আহমদ চৌধুরী এবং মা বেদুরা বেগম। ছাত্র অবস্থাতেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। তিনি ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর রাত ৩:৩০ মিনিটে চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালে মারা যান। প্রয়াত মহিউদ্দীনের দুই পুত্র। যাদের একজন নওফেল আহমেদ চৌধুরী। বর্তমান সরকারের মেয়াদে শিক্ষা উপমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যজন, বোঁরহানুল ইসলাম চৌধুরী।

মহিউদ্দিন চৌধুরী ১৯৬২ সালে এসএসসি, ১৯৬৫ সালে এইচএসসি এবং ১৯৬৭ সালে ডিগ্রি পাস করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ এবং পরে আইন কলেজে ভর্তি হলেও ছাত্র আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ায় লেখাপড়া শেষ করতে পারেননি।

তিনি ১৯৬৮ ও ১৯৬৯ সালে তিনি চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। একাত্তরে গঠন করেন ‘জয় বাংলা’ বাহিনী। সেই সময় গ্রেফতার হন পাকিস্তানি সেনাদের হাতে। পরে পাগলের অভিনয় করে কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে পালিয়ে যান ভারতে। সেখানে উত্তর প্রদেশের তান্ডুয়া সামরিক ক্যাম্পে প্রশিক্ষণরত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি স্কোয়াডের কমান্ডার নিযুক্ত হন মহিউদ্দিন। এরপর শ্রমিক রাজনীতিতে যুক্ত হন তিনি। যুবলীগের নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হলে প্রতিশোধ নিতে মৌলভী সৈয়দের নেতৃত্বে ‘মুজিব বাহিনী’ গঠন করেন মহিউদ্দিন। ওই সময় ‘চট্টগ্রাম ষড়যন্ত্র মামলা’র আসামি করা হলে তিনি পালিয়ে কলকাতায় চলে যান। ১৯৭৮ সালে দেশে ফেরেন বলে আত্মজীবনীমূলক বইয়ে উল্লেখ রয়েছে। তিনি১৯৯৪ সালে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালের মেয়র নির্বাচনে তিনি ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলেরএকজন মন্ত্রীকে পরাজিত করে তৃতীয়বারের মতো চট্টগ্রামের মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন। পাশাপাশি প্রতিপক্ষের তুলনায় ভোটের ব্যবধানও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়। তবে ২০০৯ এর নির্বাচনে প্রায় ১ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। যার কাছে পরাজিত হন, তাঁর  রাজনৈতিক গুরু হিসাবে তিনি অধিক পরিচিত ছিলেন।

একজন মহিউদ্দীনকে চাটগায়ের রাজনীতি থেকে কখনই কেহ আলাদা করতে পারবে না। তিনি অমর রাজনীতিক হিসাবেই বহাল থাকবেন। অসীম সাহস তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শ্রেষ্ঠ পুঁজি ছিল। যে সাহসের কারণে তাঁকে নিয়ে সব সময় প্রতিপক্ষের আলাদা করে হোম ওয়ার্ক করতে হত। তাঁর নিজস্ব একটা রাজনৈতিক স্টাইল ছিল, গণমাধ্যম গুলোর প্রিয় মুখ ছিলেন তিনি। কারণ, তিনি তাঁদের সাথে দল, দেশ নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলাপচারিতায় থাকতে স্বস্তিতে থাকতেন। প্রচলিত রাজনীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসাবে মহিউদ্দীন এর গণমুখী পদারচণা, খুনে সিদ্ধান্ত এবং সাংগঠনিক দক্ষতা, তাঁকে গ্রেট পলিটিশিয়ান হিসাবে জায়গা করে দেয়। তিনি কখনই জাতীয় রাজনীতির আলোচনায় যেয়ে সময় নষ্ট করতে চান নি। স্থানীয় সরকার ও আঞ্চলিক স্বার্থ উদ্ধারে তিনি অদম্য সত্তা ছিলেন। রাজনীতি করতে যেয়ে বিরোধী শক্তিসমুহকে হুংকার দিতেন, বলতেন, ” আমাকে বাধ্য করবেন না ঢাকামুখী  হতে।” 

 

মহিউদ্দীনের পক্ষে অসম্ভবকে সম্ভব করবার একটা ক্ষমতা ছিল। গবেষণায় এসছে, তিনি দলের জন্য আনুগত্যে থাকা সেই রাজনৈতিক সত্তা, যার কাছে বঙ্গবন্ধু, শেখ  হাসিনা ছাড়া অন্য কেহ গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। তিনি বিশ্বাস করতেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছি, কাজেই দেশ নিয়ে আমাদের চেয়ে কেহ বেশী ভেবেছে বা ভাবে তা বিশ্বাস করি না। তাই জঙ্গিবাদ ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধ শক্তিকে নিয়ে যারা রাজনীতি করতে চায়, তাঁদেরকে প্রতিরোধ করতে হবে। এই প্রতিরোধ করবার দৃঢ় বিশ্বাস ও পরিকল্পনার জন্যই মহিউদ্দীন চৌধুরীকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব সুপ্রতিষ্ঠা পায় না।

 

৯১

আবুল মনসুর আহমেদ

এক সত্তায় অনন্য গুনাবলীর দৃষ্টান্ত রেখে এমনিতেই তিনি ‘স্বতন্ত্র’। ইতিহাসের পাতায় তিনি ছিলেন ও থাকবেন।  তাঁর উন্নত চিন্তাশৈলী কটাক্ষের আবহে ভর করত। তিনি কলম ধরেই সমাজের নৈতিকতার রাস্তাকে আলিঙ্গন করতে তাগিদ দিতেন। ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’- শীর্ষক পুস্তক লিখেছিলেন। সেই ১৯৬৯ সালে।  স্বাধীন বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছরের আসন্ন পূর্তিতে তাঁকে পেলে প্রজন্মের মন্দ হত না। চলে গিয়েছেন। পৃথিবী ছেড়েছেন সেই ১৯৭৯ সালে। তবে চমক দিয়ে। সারাটা জীবনে বাংলার মুসলিম লীগ, যুক্তফ্রন্ট, আওয়ামী মুসলীম লীগ, আওয়ামী লীগ করলেন !  জীবনের এক্কেবারে শেষভাগে এসে অর্থাৎ ১৯৭৯ সালে আবুল মনসুর আহমেদ বললেন, চলো আমরা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ নিয়ে কাজ করি, বিএনপি করি ! 

 

১৮৯৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহন করেন আবুল মনসুর আহমেদ। তাঁর পিতার নাম আব্দুর রহিম ফরাজী।  মাতা,  মীর জাহান খাতুন। তিনি দেশের দুই প্রখ্যাত সাংবাদিক ও কলামিস্ট মাহবুব আনাম ও ডেইলি  স্টার সম্পাদক জনাব মাহফুজ আনাম এর পিতা। আবুল মনসুর আহমেদ, একাধারে রাজনীতিক, সাংবাদিক, আইনজ্ঞ ও বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্রূপাত্মক রচনা সমগ্রের রচয়িতা। ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালে জন্ম নিয়েছিলেন।

 

তিনি ১৯১৭ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষা পাশ করেন এবং ১৯১৯ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। তিনি  কোলকাতার একটি প্রতিষ্ঠান হতে  আইন বিষয়ে পাশ করেন।  তিনি নয় বছর ময়মনসিংহে আইন চর্চা করেন। তারপর কলকাতায় পেশাদার সাংবাদিক হিসাবে কাজ করেন। তিনি বিশিষ্ট আইনজীবীও ছিলেন।

গোঁড়া মোহাম্মদী পরিবারের সন্তান ছিলেন আবুল মনসুর আহমদ। লাল তুর্কী টুপি মাথায় মোহাম্মদীর পক্ষে তর্কেও যেতেন। ঘটনাক্রমে একদিন তিনি  ময়মনসিংহ জেলা স্কুলের হেড মৌলভী আলী নেওয়াজ ও শিক্ষক মৌলভী শেখ আবদুল মজিদের সংস্পর্শে আসেন। এঁদের সাহচর্যে আবুল মনসুর আহমেদ  উদারতার পাঠ গ্রহণ করেন। তার এই উদারতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি। ১৯১৮-১৯ সাল থেকে তিনি কবর পূজা এবং পীর পূজাসহ হিন্দু-মুসলিম সমাজের সকল কুসংস্কারের সরাসরি বিরোধিতা শুরু করেন।

 

আবুল মনসুর আহমেদ কার্যত  নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর কংগ্রেস আন্দোলনসমূহের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনের পরে তিনি বাংলার মুসলীম লীগের সাথে সম্পৃক্ত হন।  জনাব মনসুর,  যুক্তফ্রন্ট এর নির্বাচনী কর্মসূচি ২১-দফার অন্যতম প্রণেতা ছিলেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে পূর্ববঙ্গ পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৫৪ সালে তিনি ফজলুল হক মন্ত্রীসভায় স্বাস্থ্য মন্ত্রী নিযুক্ত হন। তিনি  ১৯৫৫ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে পূর্ববঙ্গ পরিষদের সদস্যদের ভোটে পাকিস্তান গণপরিষদ এর সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৫৬ সালে পূর্ব পাকিস্তানের যুক্তফ্রন্ট সরকারের শিক্ষামন্ত্রী এবং ১৯৫৬-৫৭ সালে বণিজ্যমন্ত্রী  হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান কর্তৃক সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর তিনি কারারুদ্ধ হন এবং ১৯৬২ সালে মুক্তি পান। পূর্ববাংলার মঙ্গলের জন্য তিনি নানা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, বিশেষ করে শিল্পায়নে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। আওয়ামী মুসলিম লীগ  (পরবর্তীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) এর প্রতিষ্ঠাতা-নেতা ছিলেন। ১৯৫৩-১৯৫৮ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগ এর সহ-সভাপতি ছিলেন।

১৯৭৯ সালে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগ দিয়ে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

গবেষণায় দেখা যায়, আবুল মনসুর আহমেদ এর জীবনে ১৯৭৯ সাল নানা কারণে ব্যতিক্রমি প্রেক্ষাপট তৈরি করে। এই বছরেই তিনি রাজনৈতিক ধারার বিরুদ্ধে যেয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগ দেন। ওই বছরেই সাংসদ হন। একই বছরে তিনি সাহিত্য ও সংস্কৃতির জায়গায় কাজ করে দেশিয় স্বীকৃতিও পান। ১৯৭৯ সালেই তিনি স্বাধীনতা পদক পান।  অতঃপর তিনি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন। 

 

আবুল মনসুর আহমেদ এর চারিত্রিক গুনাবলীর প্রায় সবকিছুই তাঁর পুত্র জনাব মাহফুজ আনাম  পেয়েছেন। শুধুমাত্র প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে অংশ নেন নাই এখনো। একজন আবুল মনসুর যদি  ব্যঙ্গাত্মক রচনায়  বিভোর থেকে সকল ক্ষেত্রে গুনগত পরিবর্তনের আশায় লড়তেন, তা দেশের সংবাদ মাধ্যম হয়ে আজ ডেইলি স্টারও বাংলাদেশের সামাজিক- সাংস্কৃতিক বাস্তবতায় তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তির মতোই হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ, সেটি একটি জাতীয় দৈনিক মাত্র। মাহফুজ আনাম শুধুমাত্র তাঁর বাবার মত করে রাজনীতি করেন নি। কিন্তু, ১৯৭৯ সালে তাঁর বাবা রাজনৈতিক আদর্শিক অবস্থান পরিবর্তন করে যে প্রতিবাদ করতে চেয়েছিলেন, সেই উদ্যোগের শেষ হয়েছে কিনা ! আজকের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নেতৃত্ব, আদর্শ এবং রাজনীতি যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, সেখান থেকে উত্তরণে পরোক্ষভাবে না থেকে প্রত্যক্ষ রাজনীতির সাথে নিজের নাম লিখিয়েই জনাব মাহফুজ আনাম রাজনৈতিক ঝুঁকি নিতে পারেন। স্বাধীন বাংলাদেশের সর্বকালের যুগশ্রেষ্ঠ অন্যতম রাজনীতিক হয়ে আবুল মনসুর আহমেদ এর শীর্ষ তালিকায় জায়গা হয় না। বরং, তিনি ভারতবর্ষ কিংবা পাকিস্তান পর্ব মিলিয়ে একজন ঐতিহাসিক চরিত্র হিসাবে আবির্ভূত হওয়ার পর্যায়ের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিসত্তা। কিন্তু, ১৯৭৯ সাল ! তাঁর উত্তরসূরীদের জন্য কোনো বার্তা ছিল কিনা তা নিয়ে গবেষণার খোরাকে যেয়ে দেখা যাচ্ছে, ইতিহাস গড়েছিলেন তিনি। যা নিয়ে খানিকটা নীরব মাহফুজ আনাম।  কিন্তু সরব কেএইচএন রিসার্চ টিম ! তাই ১০০’র মধ্যে বর্ষীয়ান আবুল মনসুর আহমেদ কে জায়গা দিয়েই বলতে হয়েছে, তাঁর প্রতিবাদকে অর্থবহ করতে রাজনৈতিক দূরদৃষ্টির উদাহরণে থেকে আবুল মনসুরকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্বও নতুন প্রজন্মের, জাতীয়তাবাদী বলয়ের !

 

 

সুপ্রিয় পাঠক,

বাংলাদেশের সর্বযুগের সেরা রাজনীতিকদের তালিকা( ১০০) প্রকাশে কেএইচএন রিসার্চ টিম কাজ করে যাচ্ছে। পরবর্তী প্রতিবেদনে ৯০ হতে ৮৬ নং তালিকায় যারা থাকছেন, তা প্রকাশ করা হবে। সে পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকুন।

 

আপনাদের মতামত এবং জায়গা পাওয়া  কারো সম্পর্কে তথ্য দিতে চাইলে নিম্নলিখিত ই মেইলে পাঠান।

 

 

 

 

5 Comments

  1. Alex TM
    April 1, 2015 at 20:27
    Reply

    Dolorum nascetur quibusdam bibendum nesciunt torquent vehicula, nostra? Nisl? Excepteur repellat provident, laboriosam! Nullam vel.

    • Alex TM
      April 1, 2015 at 20:28
      Reply

      Corporis quasi dicta voluptates, rerum vero eos quaerat, quo aliqua voluptates suspendisse quod tempus! Interdum.

      • Alex TM
        April 1, 2015 at 20:28
        Reply

        Egestas molestias erat impedit blanditiis quam, proident rutrum iste? Illum? Aenean proin. Nostrum pretium, commodi.

Leave a Reply

Close
Close