নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
বাংলাদেশের ফুটবল যখন গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত হবার পথে , তখনই জাতীয় দলের কোচ হিসেবে নিয়োগ পান জেমি ডে । ২০১৮ সালের মে মাসে ব্রিটিশ কোচ জেমি ডে’কে আনুষ্ঠানিক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ।
চলতি বছরের ১৬ জুন বাফুফে’র সাথে নতুন চুক্তি হয়েছে জেমি ডে’র । সর্বশেষ চুক্তি অনুযায়ী ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত জামাল ভুঁইয়াদের কোচ হিসেবে থাকছেন ইংলিশ-ম্যান । জেমি ডে’র অধীনে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের মুল জাতীয় দল খেলেছে ১৯টি ম্যাচ । জিতেছে আটটি , ড্র দুইটি আর হার নয়টি ম্যাচে । সাফল্যের হার ৪২.১১ ভাগ । অন্যদিকে অনূর্ধ্ব-২৩ অলিম্পিক দলের ক্ষেত্রে জেমি ডে’র বাংলাদেশ ১১ ম্যাচে হেরেছে ছয়টি । জয় দুইটি আর ড্র তিনটি ম্যাচে । এর বাইরে বেশ কিছু আন-অফিশিয়াল ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলেছে জেমি ডে’র বাংলাদেশ দল ।
জেমি ডে’র অধীনে বাংলাদেশ খুব ভাল করছে , পরিসংখ্যান সেটা বলছে না । তবে এটাও ঠিক , ২০১৬ সালে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের প্লে-অফের ফিরতি ম্যাচে স্বাগতিক ভুটানের কাছে ৩-১ গোলে হারার পর আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে নির্বাসনে যাওয়া বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টা করছে জেমি ডে’র আমলে ।
২০১৮ সালের এশিয়ান গেমসে জেমি ডের অধীনে স্মরণীয় সাফল্য পায় বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-২৩ দল । প্রথমবারের মত গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে উঠে যায় রাউন্ড অফ সিক্সটিনে । আসরে কাতারের বিপক্ষে ১-০ গোলে জয় আর থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ড্র করে চমক দেখায় বাংলাদেশ । যদিও একই বছর ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়ে হতাশ করে সমর্থকদের ।
গেল বছরের মার্চে বাহরাইনে অনূর্ধ্ব-২৩ এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় বাংলাদেশ । যদিও আসরে জেমি ডের দল ভাল খেলে নুন্যতম ব্যবধানে হারে স্বাগতিক বাহারাইন আর ফিলিস্তিনের কাছে । তবে প্রত্যাশিত জয় পায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে । সব মিলিয়ে প্রত্যাশা পূরণ করেই দেশে ফিরেছিল বাংলাদেশের অলিম্পিক দল ।
জেমি ডে’র অধীনে সাফের পর বড় ছিল এফএ গেমস ফুটবলে । ভারত না থাকায় নেপালে অনুষ্ঠিত আসরে সোনা জয়ের লক্ষ্য ছিল জামাল ভুঁইয়াদের । কিন্তু বাংলাদেশ কাঠমুণ্ডুর আসরের ফাইনালেই উঠতে পারে নি । পাঁচ দলের আসরে প্রায় জাতীয় দল নিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের তৃতীয় হয়ে ব্রোঞ্জ জয় ছিল অপ্রত্যাশিত । যদিও এসএ গেমস ফুটবলে মাত্র ছয়দিনের প্রস্তুতি নিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ , কিন্তু তবু এমন ব্যর্থতা হজম করা ছিল কষ্টের ।
তবে জেমি ডের অধীনে ২০১৯ সালটি খুব খারাপ গেছে , এমনটাও বলা যাচ্ছে না । ফিফা ফ্রেন্ডলি ও বিশ্বকাপের বাছাইসহ বিদায়ী বছরে ৯টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। যেখানে চারটি জয়ের বিপরীতে তিনটি ম্যাচ হেরেছে লাল সবুজের দল । আর ড্র দুইটি ম্যাচে । ফ্রেন্ডলি ম্যাচে দুইবার হারিয়েছে ভুটানকে । প্রতিপক্ষের মাটিতে আরেক ফ্রেন্ডলি ম্যাচে জিতেছে কম্বোডিয়ার বিপক্ষে । এছাড়া বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রথম পর্বে একবার লাওসকে হারিয়েছে আর একবার ড্র করেছে জামাল ভুঁইয়ারা ।
২০১৯ সালে বাংলাদেশ আশা জাগিয়েছে বিশ্বকাপ আর এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে । ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপ বাছাইয়ের গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ০-১ গোলে হারে বাংলাদেশ । । আফগানদের হোমভেন্যু তাজিকিস্তানের দুশানবেতে অনুষ্ঠিত ম্যাচে ভাল খেলেও শুধু গোল মিসের খেসারত দেয় বাংলাদেশ হেরে গিয়ে । এছাড়া কাতার, ভারত এবং ওমানের বিপক্ষে বাছাই ম্যাচে বাংলাদেশ ছিল অসাধারণ । কোলকাতার সল্ট লেকে জিততে থাকা বাংলাদেশ শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে ম্যাচ ড্র করে ১-১ ব্যবধানে ।
২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক এবং এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন কাতারের বিপক্ষে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে হেরেছে ০-২ গোলে । এই ম্যাচেও সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে একটি পয়েন্ট অন্তত পেতে পারত স্বাগতিকরা । বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় গোলটি কাতার পেয়েছে শেষ মুহূর্তে। হারলেও কাতারের বিপক্ষেই বাংলাদেশ দেখিয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে তাদের সেরা পারফর্মেন্স ।
নভেম্বরে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশ খেলে ওমানের বিপক্ষে । মাসকটে অনুষ্ঠিত ম্যাচটি অবশ্য স্বাগতিকদের বিপক্ষে ১-৪ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ ।
বছর শেষ ফিফা র্যাংকিংয়ে পাঁচধাপ উন্নতি হয় বাংলাদেশের । ১৯২ তম স্থান থেকে উঠে আসে ১৮৭তম অবস্থানে ।
জেমির ডে’র সাথে নতুন চুক্তির পর বাংলাদেশের মুল লক্ষ্য বিশ্বকাপ বাছাইয়ের বাদ-বাকী ম্যাচে দারুণ কিছু করা । বিশেষ করে ফিরতি লেগে ভারত , আফগানিস্তান আর ওমানের বিপক্ষে নিজ মাটিতে খেলা থাকায় দারুণ কিছু করে দেখাবার সম্ভাবনা থাকছেই জামাল ভুঁইয়াদের সামনে ।
সম্প্রতি ‘ফিফা ডট কম’ এ দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে নিজের নানা পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন জেমি ডে । বিশ্বকাপের চার ম্যাচ থেকে এক পয়েন্ট পেলেও দলের খেলা নিয়ে সন্তুষ্ট বলে জানান তিনি ।
জেমি ডে বলেছেন , ‘ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে আমরা শুরু থেকেই আন্ডার-ডগ । গ্রুপের অন্যরা আমাদের চেয়ে র্যাংকিং-এ এগিয়ে । কিন্তু তবু আমরা সবার বিপক্ষে সাহসের সাথে লড়াই করেছি । ভাগ্য সহায় থাকলে আমাদের ঝুলিতে এখন আরও বেশী পয়েন্ট থাকার কথা ছিল । ‘
যদিও বাছাইয়ের পরবর্তী তিনটি হোম ম্যাচে ভাল করতে চান জেমি ডে । কিন্তু সমস্যা হচ্ছে , করোনা মহামারীর কারণে আন্তর্জাতিক ফুটবলে দর্শক উপস্থিতির অনুমতি থাকবে কিনা সেটা এখনও নিশ্চিত না । দর্শক ছাড়া ঘরের মাঠে বাড়তি সুবিধা পাওয়া একটু কঠিন হবে বলেই মনে করেন জেমি ডে , ‘ আমাদের তিনটি ম্যাচ যদি দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে খেলতে হয়, তা হবে দুর্ভাগ্যের। কারণ, হোম ম্যাচের অন্যতম প্রধান সুবিধা হলো দর্শক সমর্থন, সেটা আমরা মিস করবো।’
তবু ঘরের মাঠে বাকী তিন ম্যাচে যত বেশী সম্ভব পয়েন্ট আদায় করে নিতে চান জেমি ডে । বাংলাদেশ বিশ্বকাপে খেলবে , এমন স্বপ্ন দেখছেন না জেমি ডে । তবে তার লক্ষ্য , ‘ই’ গ্রুপ থেকে তৃতীয় হয়ে ২০২৩ এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন ।
জেমি ডে বলেছেন , ‘ নিজেদের মাঠে খেলার জন্য এবং এশিয়ান কাপের পরের আসরে খেলার স্বপ্ন পূরণে আরও পয়েন্ট নিশ্চিত করার জন্য আমরা মুখিয়ে আছি। এই ক্ষেত্রে মাঠে নিজেদের দর্শক থাকলে ভাল হত । তাতে খেলোয়াড়রা পেতো বাড়তি উৎসাহ । ‘
বাংলাদেশে নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিফা’র ওয়েব-সাইটে জেমি ডে জানান , ‘২০১৮ সালে যখন আমি জাতীয় দলের ফুটবল কোচ হিসেবে যোগ দেই, তখন দলের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। তবে আমি বিশ্বাস করি, গত দুই বছরের মধ্যে আমরা অনেকদূর পথ এগিয়েছি। আগামী দুই বছরের মধ্যে আমাদের লক্ষ্য জাতীয় দলের হয়ে কোনো শিরোপা জেতা।’
লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশের ফুটবলের অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রয়োজন বলে মনে করেন জেমি ডে । যদি ক্রিকেটের মতো ফুটবলেও অবকাঠামোগত উন্নয়ন সম্ভব হয় তবে এশিয়ার সেরা ফুটবল দেশের তালিকায় জায়গা করে নিতে পারবে বাংলাদেশ, এমনটাই বিশ্বাস করেন জেমি ডে।
এই নিয়ে ৪০ বছরের জেমি ডের ভাষ্য , ‘এখানে ফুটবল বেশি জনপ্রিয় হলেও সুযোগ-সুবিধাটা বেশি ক্রিকেটে; অবকাঠামো, বিনিয়োগ এবং পৃষ্ঠপোষক সবদিক দিয়েই। যেটা খেলাধুলার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফুটবলের তৃণমূল থেকে ক্লাব পর্যন্ত অবকাঠামো আরো বাড়াতে হবে। তাহলে নতুন খেলোয়াড় উঠে আসবে। আমি বিশ্বাস করি, তাহলে একদিন এশিয়ার সেরা দেশগুলোর তালিকায় যেতে পারবে বাংলাদেশ।’
ইতোমধ্যেই করোনা মহামারীর কারণে কারণে স্থগিত হয়ে থাকা ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ ও ২০২৩ চীন এশিয়ান কাপের যৌথ বাছাইপর্বের ম্যাচগুলোর প্রস্তাবিত তারিখ ঘোষণা করেছে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি)।প্রস্তাবিত সূচি অনুসারে, ৮ অক্টোবর ঘরের মাঠে আফগানিস্তানকে মোকাবিলা করবেন জামাল ভূঁইয়ারা। এরপর ১৩ অক্টোবর কাতারের মাঠে খেলতে নামবেন তারা। বাংলাদেশের শেষ দুটি ম্যাচ অবশ্য নিজেদের মাটিতেই। ১২ নভেম্বর ভারত ও ১৭ নভেম্বর ওমানের মুখোমুখি হবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
আসন্ন বাছাই পর্বের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে আগস্টেই আনুষ্ঠানিক অনুশীলন শুরু করবে বাংলাদেশ দল ।
সূত্র-আহসান হাবীব সুমন/ক্রীড়ালোক
5 Comments
Alex TM
Dolorum nascetur quibusdam bibendum nesciunt torquent vehicula, nostra? Nisl? Excepteur repellat provident, laboriosam! Nullam vel.
Alex TM
Corporis quasi dicta voluptates, rerum vero eos quaerat, quo aliqua voluptates suspendisse quod tempus! Interdum.
Alex TM
Egestas molestias erat impedit blanditiis quam, proident rutrum iste? Illum? Aenean proin. Nostrum pretium, commodi.