নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
আর্জেন্টিনা দলের সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসি , সন্দেহ নেই । তিনি শুধু বর্তমান সময়ের না , আর্জেন্টিনার সর্বকালের সেরাদের তালিকায় বিনা তর্কে সেরা তিনের মধ্যে থাকবেন সেটাও নিশ্চিত । কিন্তু তাই বলে আর্জেন্টিনা দলে মেসি কি আসলেই অপরিহার্য ?
অবাক করার মত হলেও উপরের প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে অনেক আগে থেকে । বিশেষ করে ক্লাব ফুটবলে ইতোমধ্যেই সবকিছু জিতে ফেলা মেসির জাতীয় দলের হয়ে অর্জন যে খুব বিবর্ণ । যা নিয়ে নিয়মিত সমালোচনা চলে খোদ আর্জেন্টিনাতেই ।
যদিও সাধারণ দৃষ্টিতে জাতীয় দলের হয়ে অবদান মেসির অবদান মনে হতে পারে অনেক বড় কিছু । ২০০৫ সালে আর্জেন্টিনার জার্সিতে অভিষেক হবার পর তিনি খেলেছেন ১৩৬ ম্যাচ , করেছেন ৬৮ গোল । আর্জেন্টিনার সর্বকালের সেরা গোলদাতাও তিনি । ক্যারিয়ারে আর্জেন্টিনার হয়ে তিনটি কোপা আমেরিকা আর একবার বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছেন তিনি । হয়েছেন ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে ‘গোল্ডেন বল’ জয়ী সেরা খেলোয়াড় ।
অর্থাৎ আর্জেন্টিনার জার্সিতে মেসির অবদান নেহায়েতই কম না । কিন্তু তারপরেও কেন তাকে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ব্যর্থ বলা হচ্ছে ?
আসলে মেসি নিজেকে যে উচ্চতায় নিয়ে গেছেন , সেখানে আন্তর্জাতিক ফুটবলে তার কোন শিরোপা না পাওয়াই বড় ব্যর্থতা । বার্সেলোনার হয়ে দীর্ঘ ক্যারিয়ারে জিতেছেন সব মিলিয়ে ৩৪টি ট্রফি । নিজে ছয়বার জিতেছেন বিশ্বের সেরা ফুটবলারের খেতাব । অথচ সেই মেসির জাতীয় দলের হয়ে কোন ট্রফি নেই ! এটাই মেনে নেয়া খুব কষ্টের ।
সবচেয়ে বড় কথা , বার্সেলোনায় নেতা (শুধু অধিনায়ক না) হিসেবে মেসি যেমন সফল , নিজ দেশের জার্সিতে ততটাই ব্যর্থ । প্রয়োজনের সময় দলের জন্য কিছু করতে না পারার হতাশায় তিনি অনেকবার ডুবিয়েছেন দলকে । বিশেষ করে পর পর দুইটি কোপা আমেরিকার ফাইনালে চিলির কাছে আর্জেন্টিনার হারে মেসির দায় দেখছেন অনেকেই ।
সর্বশেষ বিশ্বকাপ ফুটবল আর কোপা আমেরিকার আসরে আবারও ব্যর্থ ছিলেন মেসি । বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে কোনোমতে উঠা গেলেও , এরপর আর এগুতে পারে নি আলবেসেলেস্তেরা । আর কোপায় বিদায় নেয় সেমি ফাইনালে ব্রাজিলের কাছে হেরে । শুধু তাই না , কোপায় হারের পর দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল ফেডারেশনের সমালোচনা করে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞাও পেয়েছেন আর্জেন্টিনার ক্ষুদে যাদুকর ।
বিশ্বকাপ আর কোপা আমেরিকার সর্বশেষ দুই আসরেই পুরো ব্যর্থ ছিলেন মেসি । অধিনায়ক হিসেবে দলকে বিন্দুমাত্র জাগাতে পারে নি । বিশ্বকাপের পর অনেকদিন হতাশা থেকে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসনে ছিলেন মেসি । কোপা আমেরিকার পর নিষেধাজ্ঞার পর এখন আবার তিনি জাতীয় দলের বাইরে ।
এই দীর্ঘ সময়ে আর্জেন্টিনা দলে চলছে পালা-বদলের হাওয়া । শুধু মেসি নন , নতুন কোচ লিওনেল স্কোলানি মাঝেমাঝেই আনহেল ডি মারিয়া , গঞ্জালো হিগুইন আর সার্জিও আগুয়েরোদের মত সিনিয়র খেলোয়াড়দের বাদ দেয়ার সাহস দেখাচ্ছেন । তাতে শুরুর দিকে সাফল্য না পেলেও এখন আরজেন্টিনাকে একটা দল হিসেবে খেলতে দেখা যাচ্ছে ।
চলতি অক্টোবর মাসে আর্জেন্টিনা খেলেছে দুইটি প্রীতি ম্যাচ । একটি জার্মানির বিপক্ষে । আর অন্যটি নিজ মহাদেশের ইকুয়েডরের বিপক্ষে । স্পেনের মাটিতে অনুষ্ঠিত এই দুই ম্যাচে আর্জেন্টিনার তরুণদের খেলা নজর কেড়েছে সবার । প্রথম ম্যাচে জার্মানির বিপক্ষে দুই গোলে পিছিয়ে পড়ার পরেও হারে নি আর্জেন্টিনা । ম্যাচ শেষ করেছে ২-২ গোলে । জার্মানির মত দলের বিপক্ষে দুই গোলে পিছিয়ে পড়ার পর ফিরে আসা সহজ কথা না । সেটার জন্য চাই আত্মবিশ্বাস আর মানসিক দৃঢ়তা । আর্জেন্টিনার তারুণ্যনির্ভর দলটি সেই পরীক্ষায় পাস করেছে পূর্ণ পয়েন্ট পেয়ে ।
এদিকে রবিবার (১৪ অক্টোবর) ইকুয়েডরকে ৬-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে আর্জেন্টিনা । এই ম্যাচে আর্জেন্টিনার হয়ে দুই গোল করেছেন লুকাস আলারিও। জার্মানির বিপক্ষেও একটি গোল করেছেন তিনি । বেয়ার লেভারকুসেনে খেলা ২৭ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড ধীরে ধীরে আর্জেন্টিনার নির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠছেন । তার সাথে ইন্টার মিলানে খেলা লরেটো মার্টিনেজের জুটি আশা জাগাচ্ছে ।
এছাড়া মার্কাস অ্যাকুইনার উপরে উঠে এসে আক্রমণে সহায়তা করার কুশলী খেলা দলকে সহায়তা করছে । ইকুয়েডরের বিপক্ষে দুইটি গোল আসে অ্যাকুইনার গড়ে দেয়া আক্রমণ থেকে । এছাড়া গোলরক্ষক ইগাস্টিন মার্চেসিনকেও আস্থার সাথে খেলতে দেখা যাচ্ছে । অন্যদের মধ্যে লুকাস ওকাম্পস , ডি পল , পেরেডেসরা বুঝতে দিচ্ছেন না সেই লিওনেল মেসির ঘাটতি !
সব মিলিয়ে গত দুই ম্যাচে অন্তত আর্জেন্টিনাকে একটা সত্যিকারের দল হিসেবে খেলতে দেখা গেছে । এই নিয়ে খুশী আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কোলানিও । বিশ্বকাপের পর দায়িত্ন নিয়েই যিনি বলেছিলেন , আর্জেন্টিনা দলকে শিখতে হবে মেসিকে ছাড়া খেলতে । সেটা তিনি সফলভাবেই শেখাচ্ছেন , বলা যায় । তিনি তো জানিয়েছেন , তরুণ এই আর্জেন্টিনাকে সহজে কেউ হারাতে পারবে না ।
স্কোলানি ইকুয়েডর ম্যাচের পর বলেছেন , ‘ পাঁচ থেকে ছয়জন ফুটবলার আছে যারা দলের প্রাণ। তারা অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকলেও নিজেদের প্রমাণ করেছে। নিজেদের সেরাটা দিলেও আপনি হারতে পারেন, কারণ সেরা দল সবসময় জেতে না। কিন্তু এই দলটাকে হারানো এখন অনেক কঠিন হবে প্রতিপক্ষের জন্য। ‘
চলতি মাসে খেলা দুই ম্যাচ নিয়ে আর্জেন্টিনা কোচের মন্তব্য , ‘ ‘এই সফরটা ইতিবাচক ছিল। আমরা চেয়েছিলাম তরুণরা মাঠে নিজেদের প্রমাণের সময় পাক। তারা আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে খেলতে চায়, এটা আমাকে খুবই উজ্জীবিত করেছে।’
স্কোলানির শেষ কথাটা খুব তাৎপর্যপূর্ণ । আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে এই তরুণদের যতটা উজ্জীবিত দেখা যাচ্ছে , মেসিরা কিন্তু ততটা নন । আসলে ক্লাব ফুটবলে সবকিছু পেয়ে যাওয়া মেসি গত কয়েক বছরে যেন জাতীয় দলে খেলার আগ্রহই হারিয়ে ফেলেছেন । তিনি হয়ত বুঝে গেছেন , বার্সেলোনাই নিজেকে সেরা হিসেবে ধরে রাখার ক্ষেত্রে তার আসল জায়গা ! সেই কারণে নিজের সেরাটা তিনি তুলে রাখেন স্পেনের ক্লাবের জন্যই । কিংবা বার্সেলোনার একঘেয়েমি টিকিটিকা ফুটবল ছাড়া অন্যকিছুতে তার মানিয়ে নিতে সমস্যা আছে । তবে কারণ যাই হোক , বার্সার মেসি দিনদিন আর্জেন্টিনার জন্য হতাশাই বাড়িয়ে চলেছেন ।
মেসিকে নিয়ে আর্জেন্টিনার আরেকটি বড় সমস্যা আছে । স্বাভাবিকভাবেই তারকাখ্যাতির কারণে মেসি মাঠে থাকলে আর্জেন্টিনার অন্যরা চলে যান আলোচনার বাইরে । তখন পুরো খেলা হয়ে ওঠে মেসি নির্ভর । প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা শুধু মেসিকে আটকে দিলেই আটকে যায় আর্জেন্টিনা । বার্সেলোনায় সারা বছর খেলা সতীর্থদের সাথে মেসির যে বোঝাপড়া সেটা নেই আর্জেন্টিনায় । ফলে প্রতিপক্ষের কৌশল ব্যর্থ করে মেসিকে সচল রাখাও যাচ্ছে না ।
আর এই বিষয়টা খুব সম্ভবত ধরতে পেরেছেন কোচ স্কোলানি । সেই কারণেই শুরু থেকে তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন মেসি ছাড়া আর্জেন্টিনাকে একটি দল হিসেবে গড়ে তুলতে । যদিও চূড়ান্ত রায় দেয়ার সময় এখনও আসে নি । তবু গত কয়েক ম্যাচ দেখে এটা অন্তত বোঝা যাচ্ছে , মেসিকে ছাড়াই এই আর্জেন্টিনা দল অনেক বেশী ইতিবাচক ; তারা খেলছেও ভালো !
সূত্র-আহসান হাবীব সুমন/ক্রীড়ালোক
5 Comments
Alex TM
Dolorum nascetur quibusdam bibendum nesciunt torquent vehicula, nostra? Nisl? Excepteur repellat provident, laboriosam! Nullam vel.
Alex TM
Corporis quasi dicta voluptates, rerum vero eos quaerat, quo aliqua voluptates suspendisse quod tempus! Interdum.
Alex TM
Egestas molestias erat impedit blanditiis quam, proident rutrum iste? Illum? Aenean proin. Nostrum pretium, commodi.