Blog

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

বাংলাদেশের ক্রিকেটে মেহরাব হোসেন অপি একটি ইতিহাসের নাম । খুব বেশীদিন জাতীয় দলের হয়ে খেলা হয় নি তাঁর । কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি করে ইতিহাসের অংশ হয়ে আছেন এই ওপেনার ।

১৯৯৮ সালের মে মাসে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ওয়ানডে দলে সুযোগ পান অপি । পরের বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলেন ১০১ রানের ইনিংস । এটাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম কোন ক্রিকেটারের সেঞ্চুরি । এর আগ পর্যন্ত সকলের ধারণা ছিল , বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করতে পারেন না । কিন্তু অপি সেই ধারণা ভেঙ্গে দেন সবার । এছাড়া ওয়ানডে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম হাফসেঞ্চুরিও এসেছে অপির ব্যাট থেকে ।

দেশের হয়ে নয়টি টেস্ট আর আঠারোটি ওয়ানডে খেলেছেন । সর্বশেষ দেশের হয়ে খেলেছেন ২০০৩ সালে । প্রতিভার বিচারে খুব বেশী বড় হয় নি অপির আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার । জাতীয় দলে ডাক না পেলেও প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট বহুদিন খেলে গেছেন অপি ।

১৯৯৮ সালে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে গিয়ে মারা জান ভারতীয় রমন লাম্বা । অপির ব্যাট করা বলের আঘাতেই মারা যান লাম্বা । এটি অপির ক্রিকেট জীবনের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনার একটি ।

নানা কারণে বাংলাদেশের ক্রিকেটে আলোচিত অপি এখন ক্রিকেট খেলা থেকে অনেক দূরে । কিন্তু দূরে নন ক্রিকেট থেকে । ২০১৮ সাল থেকে বেছে নিয়েছেন কোচিং পেশা । প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ঢাকা বিভাগীয় দলের কোচ হিসেবেই তাঁর কোচিং ক্যারিয়ার শুরু ।

বর্তমানে কোচ অপি পেয়েছেন আরও দায়িত্ব । এই সাবেক জাতীয় ক্রিকেটারকে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ব্যাটিং কোচ করেছে বিসিবি (বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড) ।

সর্বশেষ ২০১৯ সালের যুব বিশ্বকাপ জিতেছে বাংলাদেশ । প্রথম কোন বৈশ্বিক আসরের ট্রফি জেতায় ২০২২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনু্ষ্ঠেয় অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেও বাংলাদেশ যুবাদের নিয়ে উচ্চাশা বাংলাদেশ ক্রিকেটপ্রেমীদের। আকবরদের উত্তরসূরীদের খুঁজে বের করাই তাই এখন প্রধান দায়িত্ব মেহরাব হোসেন অপির।

রবিবার (২৩ আগস্ট) বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুরু হয়েছে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্যাম্প । ৪৫ জোন ক্রিকেটারকে নিয়ে আয়োজিত হচ্ছে এই প্রাথমিক ক্যাম্প । বিকেএসপিতে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে যুবাদের এই ক্যাম্প ।

এই ক্যাম্প থেকেই মুল স্কোয়াডের জন্য ১৫ জন ক্রিকেটার খুঁজে বের করা হবে । যাদের অন্যতম দায়িত্বে আছেন অপি । অপির এই ব্যাটিং কোচ হওয়া অবশ্য একটু নাটকীয়ভাবেই । শ্রীলঙ্কার নাভিদ নেওয়াজ এখনও বাংলাদেশে না আসায় দায়িত্ব পালন করবেন অপি ।

দায়িত্ব পেয়ে এক ভিডিও বার্তায় অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্যাম্প কিভাবে পরিচালিত হবে সেটা জানিয়েছেন যুব দলের ব্যাটিং কোচ মেহরাব হোসেন অপি। ফিটনেস, স্কিল সব ধরনের অনুশীলন ধাপে ধাপে করা হবে বলে জানিয়েছেন, জাতীয় দলের সাবেক এই ব্যাটসম্যন। এরপরই অনুশীলন ম্যাচ খেলা হবে।

অপি বলেন, ‘আমাদের এই ক্যাম্পটা তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথমে আমরা স্কিল নিয়ে কাজ করছি ব্যাটসম্যান ও বোলারদের নিয়ে। নির্দিষ্ট স্কিল আছে, পেসারদের জন্য আলাদা স্কিল রাখা হয়েছে। পাঁচদিনের একটা স্কিল ট্রেনিং আছে। স্পিনারদের জন্যও একই, পাঁচ দিনের স্কিল প্রোগ্রাম থাকবে। ব্যাটসম্যানদের জন্যও তাই। পাঁচদিন পর আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি নেটে যাব। যেখানে ব্যাটসম্যান ও বোলাররা নিজেদের দেখতে পাবে। নেটে আমরা ৮ দিন সময় পাবো। যেখানে ব্যাটসম্যান, বোলাররা নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাবে। ’

এদিকে মাঠে ফিরতে পেরে খুশি ডাক পাওয়া ক্রিকেটাররা। প্রান্তিক নওরোজ নাবিল বলেন, ‘এমন সুন্দর পরিবেশে ক্যাম্প আয়োজন করায় বিসিবিকে ধন্যবাদ। করোনাভাইরাসের কারণে আমরা অনেকদিন ঘরবন্দি ছিলাম। ফিটনেসের দিক থেকে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছি। কয়েকদিন অনুশীলন হলে আশা করি আগের জায়গায় ফিরে যাব।’

আরেক ক্রিকেটার রিশাদ খান বলেন, ‘ক্যাম্পে একসঙ্গে অনুশীলন করা অন্য ব্যাপার। এখানে অনেক ভুলের সমাধান পাওয়া যায়। অনুশীলন শুরু হয়েছে। আশা করি, আমরা উপকৃত হব।’ দু’বার করোনাভাইরাস পরীক্ষায় একবার করে পজিটিভ ও নেগেটিভ হওয়া ইফতেখার হোসেনের কাল তৃতীয়বার পরীক্ষা দিয়েছেন। আজ তার রিপোর্ট পাওয়া যাবে।

করোনা-ভাইরাস প্রকোপের কারণে এবার যুব ক্রিকেট লিগ আয়োজন করতে পারেনি বিসিবি। অনূর্ধ্ব-১৯ দল গঠন প্রক্রিয়াও থমকে ছিল। বিকেএসপির এই ক্যাম্পে অনুশীলন ও নিজেদের মধ্যে ম্যাচ খেলা থেকে বাছাই করা হবে ক্রিকেটারদের। যাদের প্রস্তুত করা হবে ২০২২ যুব বিশ্বকাপের জন্য।

সূত্র-ক্রীড়ালোক