Blog

Congue iure curabitur incididunt consequat

বাংলাদেশের সর্বযুগের শ্রেষ্ঠ রাজনীতিক( ১১-তম)- মশিউর রহমান যাদু মিয়া

কেএইচএন রিসার্চ টিমঃ

স্বাধীনতা অর্জনের পঞ্চাশ বছর পার হয়েছে। প্রিয় মাতৃভূমি কেমন আছে ? শিক্ষিত জনগোষ্ঠি বলবে, পৃথিবীর অপরাপর রাষ্ট্র যেভাবে এগিয়ে গেছে, বাংলাদেশ সেভাবে পারেনি। বৈশ্বিক প্রভাবে আধুনিক প্রজন্মের বহুমুখী খাতে উদ্যোক্তা হওয়ার মধ্যেই বাংলাদেশের কার্যত এগিয়ে যাওয়া, এমন দাবী অবশ্য অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের।

 

চাইনিজ দার্শনিক ও বোদ্ধা  কনফুসিয়াসের মতে, রাষ্ট্র একটি প্রাকৃতিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু মানুষ একে পরিবর্তন করে ফেলতে পারে! আর রাষ্ট্র মানুষের জন্য, কিন্তু মানুষ রাষ্ট্রের জন্য নয়।

 

প্রাসঙ্গিক যুক্তিতেই কনফুসিয়াসের মতবাদ সামনে চলে আসে। যখন তাঁর দর্শন ঘিরে প্রভাবিত হয়ে রাষ্ট্রিয় ব্যবস্থায় ভারতীয় উপমহাদেশে  সাংস্কৃতিক ছদ্দাবরনে ধর্মীয় রুচীর সিদ্ধান্ত দিতে হয় মানুষকে। সেভাবেই ভারত ও পাকিস্তান এর আলাদা হয়ে যাওয়া। একদিন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের পুনঃবোধ দাবী করায়, আরেকটি স্বাধীন রাষ্ট্র হলে কেমন হয় !

 

১৯৭১ সালে নয় মাসের যুদ্ধ এবং একটি স্বাধীন দেশের  জন্ম। নাম বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সর্বযুগের সেরা একশত রাজনীতিকদের নামের তালিকা ও তাঁদের রাজনৈতিক জীবন সম্যক ধারণা দিতে চাইলে অধিকাংশের ক্ষেত্রে প্রতীকী রাজনৈতিক পুস্তকের পেছনের পাতা উল্টাতেই হবে। সেই পাতা ১৯৪৭ থেকে শুরু হয় না, তবু বলা যাক, চলুক না এভাবে !

 

 

মশিউর রহমান, বয়স তখন তাঁর ২৩ হবে। দেশ ভাগের সময় । ১৯৪৭ সালের প্রেক্ষপটের কথাই বলা হচ্ছে। যিনি ১৯২৪ সালের জুলাই মাসের ৯ তারিখে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।  যাদু মিয়া নামে পরিচিত এই রাজনীতিক কে বাদ দিয়ে ইতিহাসের লিখিত ধারাভাষ্য দিতে যেয়ে চুপচাপ থাকলে প্রকৃতি বলবে, বাংলার রাজনৈতিক আকাশ হতে কখনই কেহ মেঘ সরানোর উদ্যোগে গেল না !

 

যদিও রাজনৈতিক ইতিহাসের সংজ্ঞা দিতে যেয়ে বাংলাদেশি দার্শনিক ঈশ্বরমিত্র বলছেন, “ইতিহাস হল শাসকশ্রেণির কাছেই বন্দী থাকা তাঁদেরই প্রয়োজনে জনগোষ্ঠীর ওপর চাপিয়ে দেয়া পান্ডুলিপি।”

 

রিসার্চ টিম বলছে, ইতিহাসের ধারাভাষ্য দিতে যেয়ে গবেষক দলের সত্তাগুলোও সত্য জানাতে কৃপণ হলে তাঁদের পরিচয়কে বিধৃত করা উচিত এভাবে, শাসকপক্ষীয় বিদগ্ধগোত্র !  

 

যাদু মিয়া, তৎকালীন রংপুর জেলা (বর্তমানে নীলফামারী জেলা) ডিমলা উপজেলার খগাখড়িবাড়ী গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ওসমান গণি। মাতা আলহাজ্ব আবিউন নেছা।  ছাত্র জীবনে তিনি অবিভক্ত ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে রাজনীতির গোড়াপত্তন করেন। যদিও রংপুরের সন্তান তিনি, কিন্তু স্কুল জীবনের একটি বড় সময় তাঁর কেটেছে গোপালগঞ্জ জেলায়। ওই জেলারই একটি বিশেষ  স্কুলের ছাত্র জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তথা খোকাও ছিলেন। খোকা ও যাদু’র স্কুল বন্ধুত্বের জের তাঁদের বিপরীতমুখী রাজনৈতিক জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ছিল বলে প্রচলিত আছে।

 

সূত্রমতে,  ছাত্র জীবন থেকেই যাদু সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সেই সময়ই তিনি বার্মা গমন ও যুদ্ধাহতদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। ৪০ দশকের দুর্ভিক্ষের সময় রংপুরের চরাঞ্চলে যখন প্লেগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়—- তখন জীবনের মায়া ত্যাগ করে তিনি জনগনের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর সেবার স্বীকৃতি স্বরূপই তাঁরই নামানুসারে একটি চরের নাম করণ হয়, ‘যাদুর চর’।

 

১৯৪৬ সালে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার সময় সহিংসতার বিরুদ্ধে ও হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির লক্ষ্যে হত্যাযজ্ঞের বিভৎসতার ছবি তুলে যাদু মিয়া একটি বিশেষ বুলেটিন প্রকাশ করেছিলেন। ৪০-এর শেষের দিকে তিনি ইয়াং ম্যান এসোসিয়েশন অব পাকিস্তানের পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান ছিলেন।

 

তেভাগা আন্দোলনের সময় যাদু মিয়ার ভূমিকা নিয়ে আলোচনা- সমালোচনা রয়েছে। পাকিস্তান হওয়ার পর যখন আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়, তিনি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসাবে উত্তরবঙ্গকে প্রতিনিধিত্ব করছিলেন বলে সে সময় চাউর ছিল।

 

 

এদিকে একজন বঙ্গবন্ধু যেমন শুরু থেকেই হোসেন শহীদ সোহরাওয়ারদি, মওলানা ভাসানী ও শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক কে শ্রদ্ধায় রেখে তারুণ্যের  ও যুব রাজনীতির আলেখ্য রচনায় মজে গিয়েছিলেন, ঠিক অনুরুপভাবে একজন যাদু মিয়াও প্রত্যেকের সান্নিধ্যে থেকে নিজের স্বতন্ত্র রাজনৈতিক মানসের পরিচয় দিয়ে বলতে পারছিলেন, আমিও আছি রাজনৈতিক ময়দানে। তবে মনে প্রাণে মওলানা ভাসানীর জীবন ও দর্শন তাঁকে আকৃষ্ট করে। এবং, এক পর্যায়ে ভাসানীর ভাবশিষ্য হিসাবে তাঁকে দেখা হত। যার প্রকাশ্য দিক উন্মোচিত হয়ে পড়ে, যখন ১৯৫৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান যুব লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত যুব উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। ঐ একই সালে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর আহ্বানে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলনে অনুষ্ঠানে তিনি অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন। যে কাগমারি সম্মেলন থেকেই মওলানা ভাসানীর সাথে আওয়ামী লীগের টানাপড়েন শুরু হয়। ভাসানীকে তখন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠক হিসাবে আওয়ামী লীগ তুলে ধরতে চায়।  

 

 

এভাবেই এক পর্যায়ে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপ গঠিত হয়। সাল ১৯৫৭। এদিকে যাদু মিয়া ১৯৬২ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং জাতীয় পরিষদে বিরোধী দলের উপ-নেতা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। একই বছর চীনে পাকিস্তানি সরকারী সফরে প্রতিনিধি দলের নেতা মওলানা ভাসানী অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনিই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব প্রদান করেন। ১৯৬৩ সালে পাকিস্তান সরকার বিরোধী আন্দোলনের জন্য তাকে গ্রেফতার করে। ৬৬ সালে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর আহ্বানে গণআন্দোলনের যে সূচনা হয়েছিল সেখানেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছিলেন। ৬০-এর দশকের শেষের দিকে মশিউর রহমান যাদু মিয়া ন্যাপ-এর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ও আইয়ুব বিরোধী ১১-দফা আন্দোলনে তিনি জাতীয় পরিষদের ভিতরে ও বাইরে সোচ্চার দাবী উপস্থাপন করেন এবং আন্দোলনের পক্ষে মওলানা ভাসানীর আহ্বানে জাতীয় পরিষদের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৬৯ সালে টোবাটেকসিং এ কৃষক সম্মেলনে ইয়াহিয়া খানকে গাদ্দার বলার কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং প্রহসন মূলক বিচারের মাধ্যমে সাত বছর সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়। অতঃপর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি গঠিত হয় । মশিউর রহমান যাদু মিয়া দলের অন্যতম নেতা হিসাবে ভুমিকা রাখেন।  

 

স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং  মওলানা ভাসানী-যাদু মিয়ার মধ্যকার রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়ার সুযোগ রয়েছে। স্বাধীনতার নেতৃত্ব প্রদানকারী আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর একান্ত কাছের নেতৃবৃন্দ যেমন তাজউদ্দীন আহমেদ ও সৈয়দ নজরুল ইসলামেরা যখন মিত্র দেশ হিসাবে ভারত ও রাশিয়াকে ধরে নিয়ে বৈশ্বিক পর্যায়ে ক্ষমতাধরদের সাহায্য পেতে আগ্রহী ছিলেন, ঠিক একইভাবে তখন ভারতীয় রাজনীতিতে চায়নার আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে মার্ক্সবাদী নেতা চারু মজুমদারের রাজনৈতিক ফলাফলের ওপর ভাসানী-যাদু মিয়া অপেক্ষারত ছিলেন। কারণ, তাঁরা মনে করেছিলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও সংকটের সৃষ্টি হবে এবং চারু মজুমদারের রাজনৈতিক সফলতা দৃশ্যমান হলে বাংলাদেশেও মুল ধারার নতুন রাজনৈতিক শক্তির উদয় হওয়াটা খুব কঠিন হবে না। এমন একটি সংকট আবার রাজনৈতিক সম্ভাবনার জেরেই স্বাধীনতা প্রশ্নে ভাসানী-যাদু মিয়া মুক্তির প্রত্যাশা করেও ভারতের সাথে সমন্বয়ের অভাবেই যুদ্ধকালীন বীরদ্বয় হিসাবে ইতিহাস তাঁদের উভয়কেই দাঁড় করায় না। আবার, দাঁড় করাই-ও। কারণ, বাংলাদেশের স্বাধীনতার দাবী দীর্ঘদিনের পটভুমির ওপর চাষ হচ্ছিল, যার অন্যতম নেতৃত্বে মওলানা ভাসানীই ছিলেন।

 

স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার যাদু মিয়াকে গ্রেফতার করে এবং তখন তিনি তিন বছর দুই মাস কারারুদ্ধ ছিলেন। ১৯৭৩ সালে রাজশাহী স্পেশাল ট্রাইবুন্যাল  তাঁকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু, মাত্র তিন মাসের মাথায় ১৯৭৪ সালের জুন মাসে আবারো তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৭৫ সালে নভেম্বর মাসে তিনি কারা মুক্ত হন। এমন একটি পরিস্থিতিতে যাদু মিয়ার বিরোধীতায় অনেকেই ছিলেন। যার মধ্যে আওয়ামী লীগ দাবী করছিল যে, তিনি যুদ্ধের সময় আসলে কি করছিলেন ? অতি উৎসাহী হয়ে অনেকেই কথিত প্রমাণ দিয়ে স্বাধীনতা চান নি বলে আদালতে তুলে ধরলেও তিনি বেকসুর খালাস পান। অন্যদিকে মওলানা ভাসানীকেও ভুল বোঝানোর চেষ্টা করা হলেও খুলনায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির মহাসচিব হিসাবে তিনিই কাউন্সিলে জয়যুক্ত হন।

১৯৭৬ সালে ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে ভারতের অব্যাহত পানি আগ্রাসনের প্রতিবাদে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক ফারাক্কা লং মার্চের প্রস্তুতি ও সাংগঠনিক কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব যাদু মিয়া পালন করেন। সেই সময় মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর মৃত্যুর পর ন্যাপের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

 

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন চমক দেখান সেনাশাসক জিয়াউর রহমান। যিনি আবার রাজনৈতিক চর্চার মধ্য দিয়ে জনশ্রেণির কাছে আদৃত হওয়ার চেষ্টা করছিলেন।   সেই সময়টিতেই তিনি জিয়াউর রহমানের অনুরোধে নতুন একটি জাতীয়তাবাদী শক্তির উন্মেষ ইস্যুতে কাজ করতে আগ্রহী হন । ফলশ্রুতিতে  তিনি ১৯৭৭ সালে প্রগতিশীল-দেশপ্রেমিক-গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী শক্তির সমন্বয়ে প্রথমে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট ও পরবর্তীকালে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিতে নিজ দল ন্যাপের কার্যক্রম স্থগিত করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।

 

সূত্রমতে,  ১৯৭৮ খ্রীস্টাব্দে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরোক্ষ উদ্যোগে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট নামের রাজনৈতিক দল গঠিত হলে তিনি ন্যাপ তথা ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির একাংশ নিয়ে এ দলে যোগ দেন। এই দলটি ই কিছুদিন পরে আরো কিছু দলের সাথে এক জোট হয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (সংক্ষেপেঃ বিএনপি) গঠন করে। বিএনপি গঠন করার আগে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (সংক্ষেপেঃ জাগদল) নামে আরেকটি দল তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে সভাপতি করে গঠিত হয়েছিল। ২৮ আগস্ট ১৯৭৮ সালে নতুন দল গঠন করার লক্ষ্যে জাগদলের বর্ধিত সভায় ওই দলটি বিলুপ্ত ঘোষণার মাধ্যমে দলের এবং এর অঙ্গ সংগঠনের সকল সদস্য জিয়াউর রহমান ঘোষিত নতুন দলে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯৭৮ খ্রীস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টায় রমনা রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র পাঠের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের যাত্রা শুরু করেন। জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে জিয়া ও ফলত যাদু মিয়া ঘোষণাপত্র পাঠ ছাড়াও প্রায় দুই ঘণ্টা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

 

 

অন্যদিকে সমকালীন সাংবাদিকতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কলম যোদ্ধা সদ্য প্রয়াত মিজানুর রহমান খান বেশ কয়েক বছর আগে  দৈনিক প্রথম আলোতে একটি কলাম রচনা করে ইতিহাসকে উসকে দেন নাই, বরং সত্যটা জানতে চেয়ে রাজনৈতিক সমীকরণ, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, জনগণের অংশগ্রহণ প্রশ্নে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি কে উত্তর দেয়ার তাগিদ রেখেছেন। তিনি বিএনপির বর্তমান নেতৃত্বকে বলেছেন, আপনারা কি জিয়া-যাদুর চুক্তি ও বিএনপি গঠন নিয়ে মুখ খুলবেন ?

 

মিজান সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার একটি সংবাদ সম্মেলন দেখে,বুঝে তাঁর কলামে লিখেছিলেন, “ বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াই সম্ভবত ইতিহাসের প্রথম সরকারপ্রধানের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ, যিনি স্বীকার করলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা এককভাবে প্রধানমন্ত্রীর ওপর ন্যস্ত। এরূপ ব্যবস্থা সংসদীয় সরকারপদ্ধতির স্বীকৃত রীতির পরিপন্থী।’ সে জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু তাঁর এই উপলব্ধি কতটা গণতন্ত্রমনস্ক অনুভূতিপ্রসূত, সেটা কোটি টাকা দামের প্রশ্ন। তিনি সংবিধানের সবচেয়ে বিতর্কিত ৭০ অনুচ্ছেদ, যা পার্লামেন্টকে একটি রাবার স্ট্যাম্প এবং প্রধানমন্ত্রী বা সংসদ নেত্রীর বশংবদ করে রেখেছে, সে বিষয়ে তিনি একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি।“

 

মিজান লিখলেন, খালেদা জিয়া অবশ্য বলেছেন, ‘বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোর অভিজ্ঞতায় দেশবাসী গভীরভাবে উপলব্ধি করেছে যে প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতা সংসদীয় সরকারের আবরণে একটি স্বৈরাচারী একনায়কতান্ত্রিক শাসনের জন্ম দিয়েছে। এরূপ অবস্থার অবসানকল্পে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধনীর মাধ্যমে প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতার ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনা হবে।’

মিজানুর রহমান তাঁর পরের প্যারায় লিখলেন, “বেগম খালেদা জিয়ার ওই মন্তব্য আমাকে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে জিয়া মন্ত্রিসভার সিনিয়র মিনিস্টার মশিউর রহমান যাদু মিয়ার সম্পাদিত একটি গোপন চুক্তিকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। ক্যান্টনমেন্টে বসে জিয়া যে রাজনৈতিক দল করেছিলেন, তার অন্যতম প্রধান বেসামরিক স্থপতি ছিলেন যাদু মিয়া। যাদু মিয়ার গোপন চুক্তিটি কেন আজও গোপনীয়, তার ব্যাখ্যা বিএনপিকে দিতে হবে এবং সেটা আমরা বিএনপিকে বিব্রত করতে নয়, বরং তাদের আত্মজিজ্ঞাসার স্বার্থে এটা দরকারি। কারণ, যাদু মিয়া জিয়াকে বলেছিলেন, আমি আপনাকে সামরিক লেবাস খুলে বেসামরিক লেবাস পরাতে পারি। কিন্তু আপনাকে ক্ষমতার ভারসাম্য আনাতে হবে। যাদু মিয়া দেখেছিলেন, জেনারেল জিয়া উর্দি খুলে প্রেসিডেন্ট হতে ভরসা পাচ্ছেন না। জিয়া মনে করতেন, চতুর্থ সংশোধনী রাষ্ট্রপতিকে যে ক্ষমতা দিয়েছে, তা যথেষ্ট নয়। আরও ক্ষমতা কুক্ষিগত করা দরকার। তখন যাদু মিয়া বলেছিলেন, এটা মানা যাবে না। এক ব্যক্তির হাতে এত ক্ষমতা থাকা ঠিক নয়। আপনাকে ভারসাম্য আনতে হবে। কুশলী জিয়া রাজি হলেন। যাদু মিয়া চুক্তি করিয়ে নিলেন।“

 

মিজান তাঁর লেখার চুম্বক অংশে সাহস নিয়ে লিখলেন, “আর যাদু মিয়ার গোপন চুক্তির কপি কি সত্যিই হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে? এটি ভালো-মন্দ যা-ই হোক, আমাদের জাতীয় রাজনৈতিক ইতিহাসে এর অসামান্য মূল্য রয়েছে। আমি জিয়া-যাদু গোপন চুক্তিটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। ওটা কারও মতে হতেই পারে ষড়যন্ত্রমূলক। তবু আমি বলব, এটা একটা রাজনৈতিক সন্ধিপত্র। যার মূল কথাই ছিল, দেশের সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সংস্কার করা। জিয়া-যাদু সম্পর্ক এবং সেখানে যে একটি ট্র্যাজেডি আছে, সেটা আমরা বিস্মৃত হতে পারি না। যাদু মিয়ার ভাই মেখলেসুর রহমানের (সিধু ভাই) একটি অসামান্য সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন সরদার ফজলুল করিম ও মুস্তাফা নূরউল ইসলাম এর। এটি প্রতিচিন্তার ওয়েব ঠিকানায় গত ১৭ এপ্রিল আপলোড করা হয়েছে। সিধু ভাইয়ের কথায় ইঙ্গিত আছে, জিয়া যাদু মিয়ার সঙ্গে কথা রাখেননি। তাঁর স্ট্রোক হওয়ার পরে সরকারি চিকিৎসকেরা দরকারি ইনজেকশন তাঁর শরীরে পুশ করেননি!”

 

যাদু মিয়া, হ্যাঁ, তিনি জিয়া কেবিনেটের প্রধানমন্ত্রী পদ মর্যাদায় সিনিয়র মিনিস্টার হয়েছিলেন। নিজ দলের প্রতীক ধানের শীষ কে  জিয়া তথা বিএনপির কাছে তুলে দিয়ে ইতিহাসকে কি রোমাঞ্চিত, সমৃদ্ধ করেন নি ? কিন্তু, দিনের শেষে কি পেয়েছিলেন, তা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একদিন বের করুক। যাদু মনে প্রাণে বনেদী রাজনীতিক সত্তা ছিলেন।

 

যখন দার্শনিক সক্রেটস বলেছিলেন,আত্মার উন্নয়ন না করে শারীরিক সুস্থতা অর্থহীন। তখন যাদু মিয়া রাজনৈতিক সুস্থতা চেয়ে জিয়াউর রহমানের আত্মার কাছে প্রত্যাশা করেছিলেন যে, জনশ্রেণির কাছে ক্ষমতা থাকুক, গণতন্ত্রের বিজয় হোক,  জাতীয়তাবাদী রাজনীতির পথ যেন অসুখে না ধরে কিন্তু তিনি কষ্ট পেয়েছিলেন। তাই গ্রহান্তরীত হয়েও হয়তো বলেছেন পুনরায় সক্রেটসের সুরে, মানুষের জীবনে মৃত্যুই সর্বাপেক্ষা বড় আশীর্বাদ। রাজনৈতিক জ্ঞান চর্চার মাধ্যমে তিনি একজন জিয়ার কাছে আত্মার উন্নয়ন চেয়েছিলেন, যা বহু বছর পর গণমাধ্যমকর্মী মিজানুর রহমান খান সামনে আনতে পেরেছিলেন, অতি অবশ্যই কে এইচ এন রিসার্চ টিম আরো বড় পরিসরে ইতিহাসের পাতায় সেই প্রশ্নটিকে পুনরায় সংরক্ষিত করার উদ্যোগে গেল।

 

যাদু মিয়ার রাজনৈতিক জীবন দুইটি দার্শনিক মতবাদের সংমিশ্রনে তাঁকে দাঁড়িয়ে রাখে বাংলার প্রান্তরে। যেখানে গ্রীক দার্শনিক এরিস্টটল বলেছিলেন, Democracy is when the indigent, and not the men of property, are the rulers.অন্যদিকে প্লেটো বলেছিলেন, “The heaviest penalty for declining to rule is to be ruled by someone inferior to yourself.”

 

মন্ত্রী থাকা অবস্থায় ১৯৭৯ সালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে তিনি বেশ কয়েকদিন অজ্ঞান অবস্থায় ছিলেন। হ্যাঁ,  ঢাকার পি জি হাসপাতালে ( এখন বঙ্গবন্ধু হাসপাতাল)। ক’দিন  চিকিৎসাধীন থাকার পর ১২ মার্চ মারা যান। তাঁর বড় পুত্র  শফিকুল গাণি স্বপন রাষ্ট্রপতি এরশাদের শাসনামলে বাংলাদেশের একজন মন্ত্রী ছিলেন। দেশের অন্যতম সেরা রাজনীতিক হিসাবে স্বপনও তাঁর পিতার মত করেই নিজের জাতকে চেনাতে সক্ষম হন। অন্যদিকে তাঁর নাতি হিসাবে  জেবেল রহমান গাণি সেই আবেগের রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপ এর বর্তমান চেয়ারম্যান হিসাবে রাজনীতি করছেন। এছাড়াও তাঁর কন্যা ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজনদের মধ্যেও অনেকেই আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির রাজনীতির সাথে সংযুক্ত আছেন।

 

 

 

“মানুষ সবচেয়ে আক্ষরিক অর্থে একটি রাজনৈতিক প্রাণী, নিছক একটি সমবেত প্রাণী নয়, তবে এমন একটি প্রাণী যা শুধুমাত্র সমাজের মধ্যে নিজেকে আলাদা করতে পারে।” বলেছিলেন কার্ল মার্ক্স। যাদু মিয়ার মন ও মননে রাজনীতির আশ্রয় ও প্রশ্রয় এতটাই প্রভাবিত করেছিল, মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত তিনি রাজনীতিক হয়ে বাংলাদেশের জন্য লড়ে গেছেন। উত্তরবঙ্গের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ রাজনীতিক হিসাবেই তাঁকে দেখবার সুযোগ আছে। ঝুঁকি নিতে পছন্দ করতেন। নিজেকে আলাদা করতে পেরেছিলেন অন্যদের চাইতে। কার্ল মার্ক্স হয়তো তাঁকে দেখতে পারলে আরো কিছু মতবাদ রচনায় আগ্রহী হতে পারতেন !

বাংলাদেশ যাদু মিয়াকে কিভাবে দেখছে ? গবেষণা দাবী করছে, শাসকদলগুলো বিকৃত ইতিহাস উপস্থাপনে মনযোগি। বিচ্ছিন্নভাবে পুরোনো লেজেন্ড বর্গ( রাজনীতিক) মাঝেমাঝে যাদু মিয়ার সংগ্রামী রাজনৈতিক জীবন নিয়ে মৌখিক ধারভাষ্যে থাকলেও নগন্য সংখ্যায় লিখিত বর্ণনাও তেমন করে কোথাও নেই। প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর পাশাপাশি মওলানা ভাসানিকে জানুক, চিনুক। যাদু মিয়াকেও চিনতে হবে, জানতে হবে। যে বঙ্গবন্ধু তাঁকে দেখলে বলত, কি রে যাদু কেমন আছিস ? সেই যাদুর সত্তায় যাদু ছিল। একজন যাদু মিয়ার নেতৃত্বের মধ্যে বিশেষ কি গুন ছিল ? বৈশ্বিক দূতিয়ালী করার সবিশেষ যোগ্যতা ছিল।

 

সাবেক সাংসদ শাহ জিকরুল আহমেদ, জাসদ নেতা, তিনি রিসার্চ টিম কে বললেন, আওয়ামী লীগ যাদু মিয়াকে পাকিস্তান এর বিশেষ কিছু নেতাদের সাথে গোপন বৈঠকে জাতীয় স্বার্থে মাঝেমাঝে ইসলামাবাদ, রাওয়ালপিন্ডিতে পাঠাত।, তিনি ঠিকই নানা অভিনব পন্থায় পূর্ব পাকিস্তানের স্বার্থ অর্জন করে দেশে ফিরেই বলতেন, Done !  

 

এই Done বলার ক্যারিস্মেটিক নেতার অভাব এখন বাংলাদেশে। স্বাধীনতা অর্জনের পঞ্চাশ বছর পার হলেও বাংলাদেশ এখনো পর্যন্ত পররাষ্ট্রনীতি কোন দেশের সাথে দাঁড় করাতে পারেনি, আছে পররাষ্ট্র সম্পর্ক। যাদু তাই তৎকালীন সময়ের বঙ্গবন্ধু ও মিজান চৌধুরীদেরও প্রিয় পাত্র ছিলেন। বঙ্গবন্ধু মনেই করত, বাংলাদেশে তাঁকে চ্যালেঞ্জ করার মত মেধাবী রাজনীতিকই ছিলেন যাদু মিয়া।  

 

কে/০৯/কল

5 Comments

  1. Alex TM
    April 1, 2015 at 20:27
    Reply

    Dolorum nascetur quibusdam bibendum nesciunt torquent vehicula, nostra? Nisl? Excepteur repellat provident, laboriosam! Nullam vel.

    • Alex TM
      April 1, 2015 at 20:28
      Reply

      Corporis quasi dicta voluptates, rerum vero eos quaerat, quo aliqua voluptates suspendisse quod tempus! Interdum.

      • Alex TM
        April 1, 2015 at 20:28
        Reply

        Egestas molestias erat impedit blanditiis quam, proident rutrum iste? Illum? Aenean proin. Nostrum pretium, commodi.

Leave a Reply

Close
Close