Blog

Congue iure curabitur incididunt consequat

সর্বযুগের শ্রেষ্ঠ রাজনীতিক ( ৮৬-তম)- শফিকুল গাণি স্বপন

কেএইচএন রিসার্চ টিমঃ 

 

পিতা মশিউর রহমান যাদু মিয়া। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা  বা জায়গা পেতে এমন পরিচয় থাকলে কিছুই তো লাগে না। কিন্তু, পিতার রাজনীতির হুবুহু অনুসরণে থেকে একজন শফিকুল গাণি স্বপনের রাজনৈতিক পথচলা নির্ধারিত ছিল, এমন দাবীর প্রেক্ষিতে গবেষক দল বলছে, ‘না’ আবার ‘হ্যাঁ’।

 

জনাব স্বপন, বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে সেই নাম, যেখান থেকে প্রজন্ম তাঁর সম্পর্কে আবার জেনে, শুনে, বুঝে নতুন ধারার আবহে পুরোনো রাজনীতিকে আলিঙ্গন করতে পারে। বরং আজকের বাংলাদেশে যাদু মিয়া, স্বপন কিংবা তাঁদের তৃতীয় জেনারেশন জেবেল রহমান গাণি ( স্বপন পুত্র)কে নিয়ে আলাদা করে ভাবনার জায়গায় গেলেই দেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সাথে আরেকটি আওয়ামী লীগের লড়াই চালু হতে পারে বলে মনে করবার সুযোগ আছে। সেটি বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি – ন্যাপ ( ভাসানী-যাদু- স্বপন- জেবেল) এর মাধ্যমে। 

 

দেশে যে জোটবদ্ধ রাজনীতির সংস্কৃতি চালু হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল– বিএনপি কিংবা হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের তৈরি করা রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি ‘ন্যাপ’ নেতৃত্বাধীন থেকে দুই বলয়ের রাজনীতিকে সক্রিয় রাখতে পারে। সারাবিশ্বেই সাধারণত গণতান্ত্রিক শাসনরীতিতে দুইটি দল বা জোটের রাজনীতির প্রভাব রয়েছে। সেখানে বর্তমান বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঠিক পেরে ওঠার রাজনীতিতে নেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। হ্যাঁ, তাঁরা মোটামোটি জনপ্রিয়, কিন্তু আদর্শিক রাজনীতি থেকে দূরে সুরে যাওয়াই দলটির ভবিষ্যৎ নিয়ে অন্ধকার সীমানা দৃষ্টিগোচরে আসছে বলে অনুমিত হয়।

এদিকে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর যে বিএনপি গঠন হয়েছিল, সেই বিএনপির জন্য জিয়া-যাদু মিয়ার চুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের আলোকে এককাট্টা করেছিল তাঁদেরকে। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও যাদু মিয়ার  ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি – ‘ন্যাপ’ সাময়িকভাবে বিলুপ্ত করে তাঁরা বিএনপিকে সমর্থন দিয়ে ফেলে। এমন কি দলীয় প্রতীক ধানের শীষ পর্যন্ত বিএনপির কাছে দিয়ে দেয়া হয়।   ফলশ্রুতিতে দলটি ক্ষমতায় ছিল এবং অল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়ে যায়।

 

 

জিয়াউর রহমানের হত্যা এবং আরেক সেনা ব্যক্তিত্ব হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে নিয়ে নিলে রাজনৈতিক সমীকরণে পরিবর্তন আসে। এরপরে এরশাদ পতনের পর পরবর্তী তে জিয়া-যাদুর দলের সুবিধা ভোগ করেছে  বিএনপির পরবর্তী নেতৃত্ব তথা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু, বারংবার করে ক্ষমতায় আসা ও টিকে থাকার উদ্ভট সিদ্ধান্ত, দলের মধ্যে গণতন্ত্র না থাকা, সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সাথে সখ্যতা— দলটিকে আদর্শিক রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। জনস্বার্থ সংরক্ষণের রাজনীতি না করাটাও তাঁদের রাজনীতির রাস্তাটিকে সরু করে ফেলে। এমতাবস্থায়  বেগম জিয়াদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা, এরশাদ এর দলের  দুর্বল হয়ে পড়া—- মওলানা ভাসানীর দলটাই এই বলয়ের রাজনীতির অভিভাবক  সংগঠন হয়ে ভবিষ্যতে ধরা দিলে এই প্রজন্ম কিংবা আগামী প্রজন্ম লুফে নিতে পারে। তাঁরা আওয়ামী লীগ ও ন্যাপের মধ্যে আদর্শ খুঁজে নিয়ে দুইটি বলয়ের সমর্থক হতে পারে। যাদু মিয়া যেমন বুদ্ধি করে একজন সেনা শাসক কে সামনে রেখে রাজনীতি করতে চেয়েছিলেন, তিনি জানতেন বিএনপিকে নিয়ে সম্ভব, আবার অসম্ভবও। কারণ, অসম্ভবের দিক না থাকলে কেন তিনি দলের গঠনতন্ত্রে লিখলেন যে, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ন্যাপ উজ্জীবিত হতে পারবে ! 

 

অন্যদিকে রাজনৈতিক পালাবদলে জিয়ার পরেই অপর সেনাশাসক হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় চলে গেলে যাদু মিয়া পুত্র শফিকুল গাণি স্বপনও যেন পিতার পথে হাটলেন। তিনি যোগ দিলেন জাতীয় পার্টিতে। মশিউর রহমান যাদু মিয়া বিএনপির শাসনামলে সিনিয়র মন্ত্রী হলেন, প্রধানমন্ত্রী হলেন, ঠিক একইভাবে শাফিকুল গাণি স্বপনও এরশাদ সরকারের মন্ত্রী হলেন।

 

যুগের পরিক্রমায় শফিকুল গাণি স্বপন দেখতে পেলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল পারিবারিক রাজনীতির উত্তরসূরীদের কাছে জিম্মি। তাই এরশাদ সরকারের পতনের পর বিএনপিতে যোগ দিয়েও যেন হতাশ হলেন।

দেখতে পেলেন, পিতা মশিউর রহমান যাদু মিয়াকে তাও তো সাবেক সেনা শাসক জিয়া তর্ক সাপেক্ষে রাজনৈতিক মূল্যায়নের জায়গায় রেখেছিলেন, কিন্তু বিএনপি এতটাই বেগম জিয়া ও তারেক রহমান নির্ভর দল হয়ে পড়েছে, যেখানে তাঁর পরিবারের চাওয়া- পাওয়াটাই মুখ্য। ঠিক সে কারণে রাজনীতির রহস্যপুরুষ সিরাজুল আলম খান, আসম আব্দুর রব কে নিয়ে নতুন একটি রাজনৈতিক মহাপরিকল্পনা করেও পিছু হটলেন শফিকুল গাণি  স্বপন। তখন তিনি একটি অর্থবহ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিলেন এবং ভাবলেন, একটা সময় বাংলাদেশের মানুষ একজন জিয়াকে নয়, এরশাদকে নয়, মানুষ রাজনৈতিক পছন্দে দুইজন ব্যক্তিকে অসীম শ্রদ্ধার জায়গায় রাখবে। একজন হলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। অন্যজন, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে।

 

এভাবেই তিনি পিতার করা অভিনব আইন নিয়ে মেতে উঠলেন। আবারো বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- ন্যাপ কে পুনর্জন্ম দিলেন। খুব সম্ভবত হয়তো তিনি বলে গিয়েছেন কিনা তা জানা যায় না। তবে নিশ্চিতাকারে আগামী বিশ কিংবা পঁচিশ বছর( ২০২৫-২০৩২) পরে আওয়ামী লীগের সাথে আওয়ামী ন্যাপের মধ্যকার বনেদী আসন্ন লড়াই হিসাবে তিনি দেখেছিলেন, তা নিয়ে গবেষণা করবার অযুত দিক সামনে চলে আসে। যে দায়িত্ব তাঁর মৃত্যুর পর পুত্র জেবেল রহমান গাণির ওপর বর্তায় বলে প্রমাণিত দূরদৃষ্টি সতর্ক করে। 

 

শাফিকুল গাণি স্বপন নীলফামারী জেলার সন্তান।  মাতার নাম সাবেরা রহমান। দাম্পত্য সঙ্গী হিসাবে যাকে পেয়েছিলেন, তিনিও বিদায় নিয়েছেন। পৃথিবী থেকে।  নাজহাত গাণি শাবনামও একজন স্বপন এর মৃত্যুর কিছুদিন পরেই গ্রহান্তরীত হন।  জনাব স্বপন রংপুর জিলা স্কুলে পড়েছেন। কলেজ ছিল ঢাকার নটরডেম। লন্ডনের কুইন ম্যারি ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি অর্থনীতির ওপর বিএসসি করেন।

জীবদ্দশায় ডিমলা- ডোমার তথা নীলফামারি-১ আসন থেকে সাংসদ হয়েছিলেন। তিনি উইকলি হলিডের সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। এছাড়াও বড় পর্যায়ের ক্রীড়া সংগঠক ছিলেন। ১৯৮৬ সালের ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের গভর্নিং বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স ছিল, যা অনুমোদিত হয় ইউনাইটেড কিংডম হতে।

 

শফিকুল গাণি স্বপন এর মাঝে উন্নত নেতৃত্ব ছিল, ছিল রাজনৈতিক পর্যায়ে উচ্চ মার্গের বৈশ্বিক ভাবনা। তিনি উপমহাদেশের খ্যাতনামা রাজনীতিকদের পরম প্রিয় সত্তা ছিলেন। তাঁর চরিত্রের সবচাইতে বড় দিক, তিনি মনে প্রাণে আধুনিক ছিলেন। কাউকে ‘না’ বলতে পারতেন না। মানুষের জন্য করতে চাইতেন। ভীষণ স্টাইলিস্ট এই রাজনীতিক স্বপ্নবাজ চরিত্রের ছিলেন।

 

নৈতিকতাবিরুদ্ধ কোনো কাজে তাঁকে দেখা যায় নাই। পারিবারিক রাজনীতির অনেকেই তাঁর মনের মত করে না চললেও, তিনি হতাশ হন নাই। বিরোধ পছন্দ করতেন না।  অল্প বয়সে তিনি দুনিয়া ছাড়তে বাধ্য হন। প্রজন্মের কাছে তাঁর আহবান একটাই ছিল, তা হল, বাংলাদেশের স্বার্থ। তিনি বঙ্গবন্ধুকে যেমন সম্মান করে গেছেন, সাথে বলেছেন, তোমরা মওলানা ভাসানী কিংবা আমার বাবা যাদু মিয়াকেও মনে রাখতে পারো।

 

গভীর বিশ্লেষনে ও গবেষণায় উঠে আসে, জাতীয়তাবাদ ও খানিকটা বাম ধারার রাজনীতির সংমিশ্রণে রাজনৈতিক ঐতিহাসিকতার প্রশ্নে আওয়ামী লীগের আজকের প্রজন্মের সাথে পুরোপুরি লড়াইটা করবার সামর্থ্যই ছিল শফিকুল গাণি স্বপনের। শারীরিক অসুস্থতা, তাঁকে অল্প বয়সে পৃথিবী ছাড়তে বাধ্য করে। কিন্তু,ইতিহাসের পাতায় তাঁকে আড়াল করে অর্থবহ কিছু রচিত হয় না, হতে পারে না। এমন বোধে তাঁর উত্তরসূরীরা বসবাস করে তো ?

 

 

 একটি ঐতিহাসিক অর্থবহ কিন্তু কৌতুকময় উক্তি ছিল এমন, যে, Take a good look at me, because you’ll never recognize me once my opponent gets done with me. জনাব স্বপনও তাঁর জীবদ্দশায় সব সময়েই নানা  অভিনব কৌতুকনির্ভর উক্তি এবং কোরআনের আয়াত দিয়ে উপদেশ প্রদানে সচেষ্ট ছিলেন। তিনি জানতেন, সবার দাঁতেই পোকা, ভালটা বের করা কঠিন। তবু মন্দের ভাল রাজনৈতিক সহকর্মীদেরকে নিয়ে তাঁর পথচলা ছিল।

শফিকুল গাণি স্বপনের চরিত্রের বিশেষ দিক ছিল, তিনিও তাঁর পিতার মত করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ধরে রেখে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতেন। তিনি বিরোধী রাজনৈতিক মতকেও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে তা শুনতেন। উঁচু স্তরের রাজনৈতিক পড়ালেখা ছিল। তিনি প্রতিবেশী দেশ ভারতের পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করতেন।  

 

 আব্রাহাম লিংকন বলেছিলেন, “My concern is not whether God is on our side; my greatest concern is to be on God’s side, for God is always right.” ঠিক একইভাবে শফিকুল গাণি স্বপন সব সময়ই বলের গেছেন, আল্লাহই সর্বদা বিরাজমান, আমরা শুধু তাঁর পক্ষেই থাকবো। 

একজন স্বপনের অকাল প্রস্থানে বাংলাদেশ শুধু একজন আধুনিকচেতা রাজনীতিক কে হারায় নি— তাঁর নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা, সাংবাদিক তৈরির প্রচেষ্টা, ক্রীড়াঙ্গনে সফলতা আনার আন্তরিক উদ্যোগগুলো ইতিহাসের পাতায় থেকে যাবে। বাংলাদেশও তাঁকে মনে করবে বারংবার, যখন তিনি বলতেন, আমাদের প্রজন্মের হাতে সস্তা মাদক তুলে দিয়ে মেধাহীন বাংলাদেশ করবার উদ্যোগে যারা গিয়েছে, তাঁদেরকে কারা রুখবে ? কখনো কি কেহ পারবে ? সাহিত্য ও সংস্কৃতির রুগ্ন দশা থেকেও মুক্ত হব কোনদিন ? নতুন প্রজন্ম জাগুক, দেখে যেতে না পারলেও ওরা দাঁড়িয়ে যাক, দাঁড়াতে হবে…

 

কে/ল/০৯৮  

 

 

5 Comments

  1. Alex TM
    April 1, 2015 at 20:27
    Reply

    Dolorum nascetur quibusdam bibendum nesciunt torquent vehicula, nostra? Nisl? Excepteur repellat provident, laboriosam! Nullam vel.

    • Alex TM
      April 1, 2015 at 20:28
      Reply

      Corporis quasi dicta voluptates, rerum vero eos quaerat, quo aliqua voluptates suspendisse quod tempus! Interdum.

      • Alex TM
        April 1, 2015 at 20:28
        Reply

        Egestas molestias erat impedit blanditiis quam, proident rutrum iste? Illum? Aenean proin. Nostrum pretium, commodi.

Leave a Reply

Close
Close