নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সুপারস্টার মোনেম মুন্না । যিনি নশ্বর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি দিয়েছেন অনেক বছর আগে । কিন্তু তার স্মৃতি যে এতটুকু মলিন হয় নি ভক্তদের হৃদয়ে , সেটার প্রমাণ পাওয়া গেছে প্রয়াত ফুটবলারের জার্সি নিলামে । করোনা দুর্গতদের সহায়তার জন্য নিলামে দেয়া বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডারের দুইটি জার্সি বিক্রি হয়েছে পাঁচ লাখ দশ হাজার টাকায় ।
শনিবার (৯ মে) রাতে অন লাইনে ‘অকশন ফর অ্যাকশন’ পেজের মাধ্যমে নিলামে তোলা হয় মুন্নার খেলোয়াড়ী জীবনের দুইটি জার্সি । যার একটি ছিল ১৯৮৯ সালের প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপে বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলা মুন্নার ‘২ নাম্বার’ জার্সি । যা বিক্রি হয়েছে ৩ লাখ টাকায়। এর প্রাথমিক মূল্য ছিল ২ লাখ টাকা। সেবার বাংলাদেশ দল নিজ দেশের মাটিতে জিতেছিল প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপের শিরোপা ।
প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপে খেলা মুন্নার জার্সি কিনে নিয়েছেন কার্নিভাল ইন্টারনেটের স্বত্ত্বাধিকারী।
এছাড়া মোনেম মুন্নার আবাহনীর ‘২’ নাম্বার জার্সিটিও বিক্রি হয়ে যায়। এটি ২ লাখ দশ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। যদিও এই জার্সিটি নিলামের তালিকায় ছিল না । কিন্তু মুন্না আর আবাহনীর ভক্ত মাহবুব নামে এইচএসবিসির সিইও , আরেকটি জার্সি চেয়ে বসেন সুরভি মোনেমের কাছে। ফলে সেটিও বিক্রি করে দেয়া হয় ।
এখান থেকে পাওয়া সম্পূর্ণ টাকা করোনা বিপর্যয়ে অসহায় মানুষদের জন্য খরচ করা হবে।
এদিকে একই নিলামে বিক্রি হয় বাংলাদেশি রেফারি তৈয়ব হাসানের একটি জার্সিও । যা তৈয়বের গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার একজন ব্যক্তি ৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকায় কিনে নেন। এই টাকার সম্পূর্ণ অংশ সাতক্ষীরার অসহায় মানুষদের জন্য খরচ করা হবে।
বাংলাদেশের ফুটবলে মোনেম মুন্না এক অবিস্মরণীয় নাম । ১৯৬৮ সালের ৯ জুন ঢাকার কাছেই নারায়ণগঞ্জে জন্ম মুন্নার । ঢাকায় ১৯৮১ সালে পাইওনীয়ার ডিভিশনের দল গুলশান ক্লাবে খেলে শুরু করেন ক্যারিয়ার । সেই বছর ১৯৮২ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা দলের সাথে জাতীয় দলের এক প্রদর্শনী খেলায় কিশোর মোনেম মুন্না সবার নজরে আসেন। দ্বিতীয় বিভাগের দল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ১৯৮৩ সালে মুন্নাকে দলে নেয় এবং দ্বিতীয় বিভাগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথম বিভাগে উঠে।
১৯৮৬ সালে মুন্না ব্রাদার্স ইউনিয়নে যোগদেন এবং সে বছরই মাত্র ১৮ বছর বয়সে জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পান । ১৯৮৭ সালে মুন্না চলে আসেন বাংলাদেশের সেরা ক্লাব আবাহনী ক্রীড়া চক্রে । ১৯৯৭ সালে অবসর নেয়ার আগ পর্যন্ত ছিলেন আবাহনীতেই । ঢাকার মাঠে তিনি পরিচিত ছিলেন ‘আবাহনীর মুন্না’ হিসেবেই । এক সময়ে ঢাকা লীগের সবচেয়ে বেশী পারিশ্রমিক পাওয়া ফুটবলার ছিলেন মুন্না ।১৯৯১ সালে আবাহনী তাকে পারিশ্রমিক হিসেবে প্রদান করে ২০ লক্ষ টাকা । যা সেই সময়ে এই উপমহাদেশের ফুটবলারদের জন্য ছিল অকল্পনীয় ।
শুধু দেশের লীগে না , মুন্না ১৯৯১/৯২ সালে কলকাতার ইস্টবেঙ্গলের হয়েও । কোলকাতার ফুটবল দর্শকরা এখনও মুন্নার নাম স্মরণ করে শ্রদ্ধার সাথে ।
বাংলাদেশে জাতীয় দলের হয়ে মুন্না প্রথম খেলার সুযোগ পান ১৯৮৬ সালে। সে বছর সিউলে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসের জন্য নির্বাচিত দলে তিনি প্রথমবারের মতো ডাক পান। একটানা আধিপত্য বিস্তার করে খেলেন ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত। ১৯৯৫ সালে তারই নেতৃত্বে মায়ানমারে অনুষ্ঠিত চার জাতি কাপ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের বাইরে প্রথম বাংলাদেশ কোন ট্রফি জেতার অনন্য কৃতিত্ব দেখায়।
বাংলাদেশের ফুটবলের ইতিহাস লিখতে গেলে মুন্নার নাম আসবেই । আবাহনী আর জাতীয় দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করা মুন্না ছিলেন একজন কমপ্লিট ডিফেন্ডার । সাথে ছিল নেতৃত্ব গুণ । ফ্রি-কিক থেকে গোল করার সহজাত এক ক্ষ্মতা ছিল তার । সব মিলিয়ে মুন্না বাংলাদেশের ফুটবলে সবচেয়ে বড় তারকাদের একজন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে খুব বেশী সময় নেন নি ।
মুন্না কত উঁচুমানের খেলোয়াড় ছিলেন , সেটা বোঝা যায় অটো ফিস্টারের কোচ । বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক জার্মান কোচ ফিস্টার বলেছিলেন , ‘ হি ওয়াজ মিসটেকেনলি বর্ন ইন বাংলাদেশ!’
অর্থাৎ ফিস্টার বিশ্বাস করতেন , মুন্না বাংলাদেশের ফুটবলের মানের চেয়ে অনেক উঁচুমানের খেলোয়াড় ছিলেন ।
খেলোয়াড়ী জীবন শেষে মুন্না আবাহনীর ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছেন । কিন্তু দুরারোগ্য কিডনি রোগে আক্রান্ত মুন্না ২০০৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যান না ফেরার দেশে । সেই সময়ে তিনি ছিলেন মাত্র ৩৮ বছরের যুবক ।
মুন্নার মৃত্যুর পর খুব যত্ন করে তাঁর আটটি জার্সি ও এক জোড়া বুট আগলে রেখেছিলেন মুন্নার স্ত্রী সুরভী। সেখান থেকে করোনার এই সংকটকালে দেশের দুস্থ মানুষের সহায়তার লক্ষ্যে প্রিয় জার্সিটা বের করে দিয়েছেন তিনি। সুরভীর প্রত্যাশা শুধুই মুন্নার জার্সির সম্মান, ‘খুব যত্ন করে রেখে দিয়েছিলাম জার্সিটি। মুন্নার কথা মনে পড়লেই দেখতাম। দুস্থ মানুষদের সহায়তার লক্ষ্যে জার্সিটি নিলামের জন্য দিয়েছি। এখান থেকে আমার কিছু চাওয়ার নেই। আমি শুধু চাই আমার স্বামী মুন্নার সম্মান যেন থাকে। জার্সি বিক্রির পুরো অর্থই প্রদান করা হবে দুঃস্থদের সহায়তায়।’
বর্তমানে মুন্নার স্ত্রী সুরভি মেয়ে ইউসারা মোনেম দানিয়া আর ছেলে আজমান সালিদকে নিয়ে বসবাস করছেন ঢাকাতেই ।
সূত্র-আহসান হাবীব সুমন/ক্রীড়ালোক
5 Comments
Alex TM
Dolorum nascetur quibusdam bibendum nesciunt torquent vehicula, nostra? Nisl? Excepteur repellat provident, laboriosam! Nullam vel.
Alex TM
Corporis quasi dicta voluptates, rerum vero eos quaerat, quo aliqua voluptates suspendisse quod tempus! Interdum.
Alex TM
Egestas molestias erat impedit blanditiis quam, proident rutrum iste? Illum? Aenean proin. Nostrum pretium, commodi.