Blog

Congue iure curabitur incididunt consequat

তাঁরা বাংলাদেশের যুগশ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক নেতা

কেএইচএন রিসার্চ টিমঃ 

 

“দেশের রাজনীতি, জনপ্রতিনিধি, শাসন রীতি, সংবিধান, জাতীয় নির্বাচন, স্থানীয় সরকার, রাজনৈতিক দল প্রভৃতি নিয়ে গবেষণারত সংস্থা কেএইচএন রিসার্চ টিম এবার জানান দিয়েছে, তাঁরা বাংলাদেশের সর্বযুগের সেরা একশত রাজনীতিকদের নাম ঘোষণা করবে।

আগস্ট ২৪, ২০২০  তারিখ হতে ধারাবাহিকভাবে পর্যায়ক্রমে দেশের কৃতি সন্তানদের নাম ঘোষণা করা হচ্ছে। চার যুগের চেয়ে একটু বেশী বয়সী স্বাধীন বাংলাদেশের বরেণ্য রাজনৈতিক বর্গের জনপ্রিয়তা, কর্মদক্ষতা  ও নেতৃত্বের ওপর ফলত এই গবেষণা চলবে বলে মত রেখেছেন সংস্থাটির প্রধান গবেষণা কর্মী কামরুল হাসান নাসিম

নাসিম বলেন, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীকে সামনে রেখে পঞ্চাশ বছরের বাংলাদেশে আমরা অভিভাবক হিসাবে যাদেরকে পেয়েছিলাম, তাঁদেরকে স্মরণ করার পাশাপাশি যারা এখনো মাটি ও মানুষের জন্য লড়ে যাচ্ছেন—- তাঁদের নামের তালিকা প্রকাশে আমরা কাজ করছি। আমরা এই একশত রাজনীতিকদের নাম শুধু নয়, তার সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত, কর্ম, ঐতিহাসিক ভুমিকা, সামাজিক রাজনৈতিক পরিচিতি তুলে ধরবার মাধ্যমে ভিন্ন ধারার সংস্কৃতির অনুশীলন করতে চাই। যেখানে যিনি ১০০ স্থান অধিকার করবেন, তিনিই দেশের সেরা একশত রাজনীতিকের শেষ প্রতিনিধি। যিনি ১ নং স্থানে থাকবেন, তিনিই গেল পঞ্চাশ বছরের শ্রেষ্ঠ রাজনীতিক হিসাবে বিবেচিত হবেন।  সর্বযুগের শ্রেষ্ঠ !

তিনি বলেন, “দেশিয় রাজনীতির ওপর আমরা প্রায় আঠার বছর ধরে গবেষণা করে আসছি। বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ধরণ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, মেধা, দক্ষতা, দূরদৃষ্টি, দেশপ্রেম, সু-বক্তা হওয়া, চরিত্র, ঘটনা প্রবাহের ওপর দ্রুত সিদ্ধান্ত দেয়া, জাতীয় সংসদে ভুমিকা, টক শোতে দক্ষতা, বাচনভঙ্গি, জাতীয় রাজনীতিতে ভুমিকা, বৈশ্বিক রাজনীতির বোধ, পররাষ্ট্রনীতি, প্রতিরক্ষানীতি, সামাজিক ছদ্দাবরনে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করা— এমন নানা কিছুকে অগ্রাধিকার দিয়ে এই গবেষণা চলছে।”

নাসিম বলেছেন, “আমার নেতৃত্বে পুরোনো ও নতুন কর্মীদের নিয়ে টানা ৮০ দিন কাজ করবার পর আমরা এই তালিকা প্রকাশে মনোযোগি থাকছি।   টানা ১৮ বছর ধরে আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিক প্রেক্ষিতের ওপর গবেষণারত আছি। যা পুস্তক আকারে প্রামাণ্য গ্রন্থ প্রকাশ সহ, ওয়েব পোর্টালে পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে, তুলে ধরা হয়েছে দেশের জাতীয় দৈনিক গুলোয় গবেষণা সম্বলিত প্রতিবেদন প্রকাশের নানা দিক।  এবার আমরা আমাদের অফিসিয়াল সাইটে এই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা সম্বলিত তালিকা প্রকাশে থাকবো। অতি অবশ্যই নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের যোগ্যতার ভিত্তিতেই স্থান মিলবে বলে আশা করছি। ”

কামরুল হাসান নাসিম বলেন, “জরিপ এবং গবেষণার মধ্যকার পার্থক্য রয়েছে। এমন উদ্যোগটি জরিপের মাধ্যমে নেয়া হলে শুধুমাত্র ‘জনপ্রিয়তা’ কে গ্রাস করে অর্থবহ বাস্তবতাকে মৃত করে পরিকল্পনাটিকে নিরাশ করত। কারণ, বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ এখনো মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করে না, ভাল ও মন্দ বাছতে পারার যোগ্যতায় নেই। তাঁরা সামাজিক- সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিকভাবে শিক্ষিত নন।  সঙ্গত কারণেই গবেষণার মাধ্যমেই আমরা বাংলাদেশের ৫০ বছরের শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক নেতাদের মূল্যায়ন করতে চাই।

 

এদিকে এই গবেষণায় মোট ৪০০ জন রাজনীতিক স্থান পান। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় হতে শুরু করে ২০২০ সাল পর্যন্ত, যারা রাজনীতির জন্য অবদান রেখেছেন, তাঁদের সংক্ষিপ্ত নামের তালিকা করেই কাজটিকে অর্থবহ করবার উদ্যোগে যাওয়া হয়েছে। দেখা হয়েছে বিশেষত চারটি দিক। এক, সততা। দুই, নেতৃত্ব। তিন, দক্ষতা। চার, বিশেষ ভুমিকা। 

 

গেল দুইটি প্রতিবেদনে প্রকাশিত তালিকায় যারা স্থান নিয়েছিলেন তাঁরা হলেন, 

 

১০০ 

লেঃ জেঃ মাহবুবুর রহমান 

৯৯

ইসরাফিল আলম

৯৮

কর্নেল অলি আহমেদ 

৯৭

জি এম কাদের 

৯৬

আমির হোসেন আমু 

৯৫

হান্নান শাহ 

৯৪ 

মোহাম্মদ নাসিম 

৯৩

মিজানুর রহমান চৌধুরী

৯২

এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী

৯১

আবুল মনসুর আহমেদ

 

পূর্ববর্তী দুইটি প্রতিবেদন পড়তে নীচের লিংক-এ ক্লিক করুন। 

সর্বযুগের সেরা একশত রাজনীতিক ( প্রথম ধাপ)

সর্বযুগের সেরা একশত রাজনীতিক

 

বাংলাদেশের সর্বযুগের সেরা রাজনীতিকদের তালিকায় যারা ৯০, ৮৯,৮৮,৮৭ ও ৮৬ স্থানে জায়গা করে নিলেন, চলুন সে সকল সম্মানিত রাজনীতিক বর্গ সম্যক জেনে নেয়া যাকঃ 

 

৯০

আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ 

 

না, তিনি জীবদ্দশায় মন্ত্রী হন নাই, বড়সড় দায়িত্ব নিয়ে জাতীয় আলোচনায় তেমন করে আসতে পারেন নাই। কিন্তু, আঞ্চলিক রাজনীতির ‘আদর্শ’ হয়ে গ্রেটার ময়মনসিংহ অঞ্চলের অবিসংবাদিত নেতা হিসাবে তিনি আজও আদৃত এক নাম। তিনি গ্রহান্তরীত হয়েছেন। ২০০৭ সালে পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নেন। তবে ময়মনসিংহ জেলার গফরগাও এলাকার জনমানুষের কাছে তিনি সর্বকালের সেরা এক সংগঠক হয়েই আছেন, যার ফলশ্রুতিতে গবেষণা দাবী করছে, গোলন্দাজ সারাটা জীবন এলাকার মানুষের সুখ দুঃখ দেখেই চির প্রস্থানের রাস্তায় পথিক হয়েছেন। কিন্তু তাঁর নেতৃত্ব এবং দক্ষতা তাঁকে অমর করে রেখেছে।

আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ মহান স্রষ্টায় বিশ্বাসী একজন পরহেজগার ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ‘আলহাজ্ব’ হয়েছিলেন।  একজন গোলন্দাজের রাজনীতি নিয়ে পরখ করলে দেখা যায়, তিনি ১৯৬২ সালের শিক্ষা কমিশন নিয়ে আন্দোলন এবং অতি অবশ্যই ১৯৬৬ সালের ৬ দফা নিয়ে সংগ্রাম করে একজন দেশপ্রেমিক সৈনিক হিসাবে নিজের দেশাত্মবোধকে জাগ্রত করেছিলেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি অংশ নেন। স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি– ন্যাপ ( মোজাফফর) – এ যোগ দিয়ে রাজনৈতিক জ্ঞানে শিক্ষিত হন। ন্যাপের হয়েই তিনি ১৯৭৩ ও ১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। এরপর তিনি স্থানীয় রাজনীতিতে মনোযোগী হয়ে পড়েন। যার ফলশ্রুতিতে তিনি ১৯৮৯ সালের উপজেলা চেয়ারম্যান হয়ে  বলতে চেয়েছিলেন, আমি এলাকার মানুষের ভাগ্যান্নোয়নে কাজ করতে বদ্ধ পরিকর।

 

১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নেন।  ময়মনসিংহ-১০ আসন থেকে সেবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নির্বাচন বয়কট করলে তিনি অংশগ্রহণ করেন নি। জুনে অনুষ্ঠিত ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, তিনি বিএনপির ফজলুর রহমান সুলতান কে পরাজিত করেছিলেন। ২০০১ সালে তিনি আবারও একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার নিগুয়ারী গ্রামে তার নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হল রুস্তম আলী গোলন্দাজ। প্রয়াত গোলন্দাজ জগন্নাথ কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। তিনি পেশা হিসাবে কৃষিকে নিয়েছিলেন।

ছাত্রজীবনে তিনি ছাত্র ইউনিয়ন থেকে জগন্নাথ কলেজের সাধারন সম্পাদক হয়েছিলেন। ময়মনসিংহ জেলার ছাত্র ইউনিয়নের সহ সভাপতিও হয়েছিলেন। বাম ধারার রাজনীতি করবার অভিজ্ঞতা, নৈতিকতা শেখা এবং শ্রেণি সংগ্রামের লড়াই করার মানসে থেকে তিনি দেশের জনপ্রিয় দল আওয়ামী লীগের হয়ে শ্রেষ্ঠ পর্যায়ের একজন কর্মী থেকে নেতৃস্থানীয় চরিত্র হয়ে পড়েন। তাঁর জীবনের লক্ষ্য ছিল দারিদ্র বিমোচন করা, দুর্নীতি বন্ধ করা । মুক্ত বাজার অর্থনীতি ও ভিসামুক্ত এক পৃথিবীর স্বপ্ন দেখতেন আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ।

গোলন্দাজের শখ ছিল বই পড়া।  মাহফুজা গোলন্দাজের সাথে বিবাহ বন্ধনে তিনি আবদ্ধ হন। এই দম্পতির দুই পুত্র ফুয়াদ গোলন্দাজ জগলু (মৃত) ও ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল। যাদের মধ্যে গোলন্দাজের যোগ্য উত্তরসূরী হিসাবে ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল এখন বাবার আসনেরই সাংসদ। যাকে অত্যন্ত মেধাবী ও প্রতিভাধর রাজনীতিক হিসাবে দেখবার সুযোগ রয়েছে। আলতাফ গোলন্দাজের এক কন্যা। নাম আঞ্জুম গোলন্দাজ ! 

আলতাফ গোলন্দাজের শ্রেষ্ঠ দিক ছিল গণমুখী হওয়াটা। সাধারণ মানুষের সাথে মিশতে পারার এমন সামাজিক যোগ্যতা, তাঁকে রাজনীতিতে সফল করে দেয়। ঘটনা প্রবাহের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত দেয়া, নিজের দলের জন্য সাংগঠনিক দক্ষতা প্রদর্শনের মধ্যে তিনি তাঁর জাতকে চিনিয়ে দেন।  দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের পাতায় তাই তাঁর নাম । আগপিছে যে-ই থাকুক, গোলন্দাজও একটি নাম,  যোগ্যতাবলে তিনি দেশের অন্যতম সেরা রাজনীতিক হয়েই বেঁচে রইবেন।

 

৮৯

তরিকুল ইসলাম

 

সাংগঠনিক দক্ষতা, আঞ্চলিক রাজনীতির অভিভাবকত্ব এবং ক্রান্তিকালীন সময়ে জাতীয় রাজনীতিতে ভুমিকা রাখবার মধ্য দিয়ে তিনি দেশবাসীর কাছে  সুপরিচিত এক রাজনৈতিক সত্তা হিসাবে ছিলেন। পৃথিবী ছেড়েছেন। ২০১৮ সালেই।  কিন্তু, বাংলাদশের পুরোনো জেলা যশোরের মানুষগুলোর কাছে তিনি আজো একটি প্রতিষ্ঠানের মতো। বিশেষত জাতীয়তাবাদী বলয়ের কাছে তিনি ‘আদর্শ।‘ যদিও যশোরের জনগোষ্ঠির বড় একটি অংশ তাঁকে পেশীশক্তি নির্ভর রাজনীতিক বলে আজো মনে করে।

 

তরিকুল ইসলাম ১৯৪৬ সালের ১৬ নভেম্বর  জন্মগ্রহণ করেন। যশোর জেলার এই সন্তান ১৯৫৩ সালে  যশোর জিলা স্কুলে ভর্তি হয়ে ১৯৬১ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করেন। যশোর মাইকেল মধুসূদন কলেজ থেকে ১৯৬৩ সালে আইএ ও ১৯৬৮ সালে অর্থনীতিতে বিএ পাশ করে ১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রী অর্জন করেন। পিতা আব্দুল আজিজ পেশায় একজন ব্যবসায়ী ছিলেন ও মাতা মোসাম্মৎ নূরজাহান বেগম ছিলেন একজন গৃহিণী। তিনি দক্ষিণ পশ্চিমবঙ্গের আলোচিত  ‘দৈনিক লোকসমাজ’ পত্রিকার প্রকাশক হিসাবে ছিলেন।

 

তরিকুল ১৯৬২ সালে যশোর মাইকেল মধুসূদন কলেজের জরাজীর্ণ শহীদ মিনার মেরামত করলে তৎকালীন সামরিক সরকার তাকে গ্রেফতার করে। তিনি ১৯৬৩-১৯৬৪ শিক্ষাবর্ষে ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থী হিসেবে মাইকেল মধুসূদন কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।]

তিনি ১৯৬৮ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন করে নয় মাস রাজশাহীত এবং যশোরে কারাভোগ করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়ায় আবারো কারাভোগ করেন।

 

তরিকুল ইসলাম  ১৯৭০ সালে আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগদান করেন। সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি থেকে প্রথমে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল পরে জিয়াউর রহমানের গড়া দল  বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগ দেন তিনি। ১৯৭৮ সালের বিএনপির প্রথম আহ্বায়ক কমিটির ৭৬ সদস্যের অন্যতম সদস্য তিনি। তিনি যশোর জেলা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাকালীন আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮০ সালে তিনি জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এ ছাড়াও তিনি বিএনপির যুগ্মমহাসচিব, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, ভাইস চেয়ারম্যান ও ২০০৯ সালের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পঞ্চম কাউন্সিলে স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।

 

তিনি ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদে বিলুপ্ত যশোর-৯ আসন থেকে প্রথম বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর পর ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালের ও ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের সময় তিনি সমাজকল্যাণ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ছিলেন। ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় জোট সরকারের সময় তিনি প্রথমে তথ্য ও পরে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

 

তরিকুল ইসলামের স্ত্রী নারর্গিস ইসলাম যশোর সরকারি সিটি কলেজে বাংলা বিভাগের উপাধ্যাক্ষ পদে কর্মরত আছেন। তাদের দুটি ছেলে সন্তান (অমিত ও সুমিত) রয়েছে। যার মধ্যে পিতার মৃত্যুর পর অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবে নিয়োজিত আছেন। তরিকুল ইসলাম ৪ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। তিনি কিডনি, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন।

 

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মন্দ সময়ে তরিকুল ইসলামই পারতেন দলকে পরিচালনা করতেন, তা চাউর ছিল। শারীরিক অসুস্থতা তা হতে দেয়নি। ২০০৭ সালের ১/১১ সরকারের পর হতেই জনাব তরিকুল ইসলামের ও বিএনপির রাজনীতি সূর্যাস্তের মত করে ডুবতে থাকে বলে কথিত আছে। শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে তিনি টিকে থাকতে পারলে, বিএনপির রাজনীতি( ২০০৮-২০১৮) পিছিয়ে পড়ত না বলে রাজনৈতিক গবেষণায় উঠে এসেছে। তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বের সাথে  বুদ্ধিদীপ্ত বচনে তাঁর নিজের দল চাঙ্গা হয়ে ওঠার বাস্তবতায় থাকতো। তিনি যখনই দলের মুখপাত্র হয়ে কথা বলতেন, তখনই দেশের জাতীয় রাজনীতি নড়েচড়ে বসত। যদিও মারা যাবার আগে তিনি দল নিয়ে, শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে হতাশ ছিলেন। নিজের জীবনের শেষভাগে বিছানায় না পড়ে গেলে তরিকুল ইসলাম দলের হয়ে কার্যকরী ভুমিকা রেখে বিএনপিকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় পুনরায় নিয়ে যাবার পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারতেন বলে গবেষণা দাবী করছে। যেহেতু তা বাস্তব হয়ে ধরা দেয়নি, সে কারণেই দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একজন তরিকুল ইসলামের অবস্থান  সর্বযুগের শ্রেষ্ঠ হওয়ার তালিকায় একশত’র মধ্যে স্থান করে নিলেও  সেরা কুড়ির মধ্যেও তাঁর জায়গা মিলত বলে মনে করার সুযোগ আছে।

 

৮৮ 

হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী

 

 

কূটনীতিবিদ হতে মুলধারার রাজনীতিক হয়ে যাওয়া। সফল হওয়া ! তেমনই এক ব্যতিক্রমি সত্তা তিনি। সিলেট জেলার কৃতি এই মানুষটির পেশাগত সাফল্য তাঁকে আর দশজন রাজনীতিক হতে পৃথক করে দেয়। দিয়েছিলও। এই তিনিই ১৯৭১ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তখন তিনি নতুন দিল্লীতে বাংলাদেশ মিশনের প্রধান ছিলেন। ৫ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে ভারতের সংসদ অধিবেশনে ভাষণ দেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায়ে ৪০টিরও অধিক দেশের সাথে কূটনৈতিক তৎপরতা চালান। স্বাধীনতা পরবর্তীতে তিনি রাষ্ট্রদূত ও পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭৬ সালের পর সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া এবং ভ্যাটিকানেও একই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

 

হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী, জন্ম ১১ নভেম্বর ১৯২৮ সালে সিলেট শহরের দরগা গেইটের রশিদ মঞ্জিলে। তার পিতা আব্দুর রশিদ চৌধুরী ছিলেন অবিভক্ত ভারতের কেন্দ্রীয় বিধান সভার সদস্য। মাতা,  সিরাজুন নেছা চৌধুরী ছিলেন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য।

সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার হাই মাদ্রাসা সেকশনে প্রাথমিক শিক্ষা ও আসামে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে ১৯৪৭ সালে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী। তারপর ইংলিশ বারে অধ্যয়ন করেন ও লন্ডনের ইনার টেম্পলের একজন সদস্য হন। লন্ডনেরই ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠান’ থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়াও, ম্যাসাচুসেটসের ফ্লেচার স্কুল অব ল অ্যান্ড ডিপ্লোমেসি থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। গ্রেট ব্রিটেন ও ইউরোপে পাকিস্তান ছাত্র সংসদের সভাপতি ছিলেন। সে সুবাদেই তিনি যুক্তরাজ্যে প্রথম এশিয়ান স্টুডেন্টস কনফারেন্স আয়োজনে সক্ষমতা দেখান।

হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী ১৯৫৩ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের বৈদেশিক সম্পর্ক বিভাগে যোগদান করেন। এর ফলে তিনি ঐ বিভাগের আওতায় বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশ নেন। এছাড়াও, লন্ডনের ব্রিটিশ বৈদেশিক কার্যালয় এবং কমনওয়েলথ কার্যালয়েও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। কূটনীতিবিদ হিসেবে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন শহরে অবস্থান করেছিলেন। তন্মধ্যে রোম বাগদাদ প্যারিস লিসবন, জাকার্তা এবং নতুন দিল্লী অন্যতম।

হুমায়ূন রশীদ চাকুরি থেকে অবসর নিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যোগ দিয়ে উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি সিলেট-১ (সদর-কোম্পানীগঞ্জ) ও সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুনামগঞ্জ) আসন থেকে ১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির হয়ে প্রথম সদস্য সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর পর ১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির হয়ে ও জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে সিলেট-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৪ জুলাই ১৯৯৬ সালে তিনি জাতীয় সংসদের স্পিকার নির্বাচিত হয়ে আমৃত্যু এ পদে বহাল ছিলেন। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ১০ জুলাই ২০০১ সালে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। সিলেটের শাহজালালের মাজার সংলগ্ন কবরস্থানে সমাহিত করা হয় তাঁকে।

 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের কলেজ অব উইলিয়াম অ্যান্ড ম্যারি থেকে ১৯৮৪ সালে ‘মহাত্মা গান্ধী শান্তি পুরস্কার’ পান। বিশ্ব শান্তিকল্পে অনবদ্য কূটনৈতিক ভূমিকার জন্য তাকে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এছাড়াও তিনি ‘উ থান্ট শান্তি পদক’ লাভ করেছিলেন। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তাকে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়। এছাড়াও তাঁর সম্মানে ঢাকা থেকে সিলেট শহরের প্রবেশপথে একটি চত্বরের নামকরণ করা হয়েছে ‘হুমায়ূন রশীদ চত্বর’।

 

হুমায়ূন রশীদ চৌধুরীর জীবন পরিক্রমাকে এক নজরে দেখতে চাইলে দেখা যায়, বৈশ্বিক রাজনীতি বিষয়ক  আলাদা জ্ঞানের  অধিকারী ছিলেন। ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন রাজনীতিক, অল্প কথা বলতেন কিন্তু দক্ষতাকে বড় করে দেখতে চাইতেন। তাঁর মাঝে দেশপ্রেম ছিল প্রবল। কথা বলবার একটি নিজস্ব ধরণ, রাশভারী ভাবমূর্তি, বেশভুষায় ইসলামী আভিজাত্য ফুটে উঠত। জাতীয় সংসদের স্পীকার পদে নিযুক্ত হয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তা পালন করেন। সততা ও মেধা— একজন হুমায়ূনের প্রধান সম্বল ছিল। সে ধারাবাহিকতায় ইতিহাসের পাতায় এই বনেদী রাজনীতিকের জায়গা হবে তা নিয়ে কারো দ্বিধা ছিল না, থাকতে পারে না।

 

 

৮৭ 

নজরুল ইসলাম খান 

তাঁর মত করে শুদ্ধ করে কথা বলবার অভ্যাস, খুব কম রাজনীতিক আছেন বাংলাদেশে, যা বিরল। নীতি নৈতিকতা, শ্রমিক রাজনীতি, দাফতরিক দিক দেখভাল করবার দক্ষতা, সাংগঠনিক সমন্বয়— তাবৎ কিছুকে নিয়ে গবেষণার খোরাকে যেয়ে দেখা যাচ্ছে, একজন নজরুল ইসলাম খান খ্যাতনামা বহু রাজনীতিদের পিছু ফেলে ইতিহাসে জায়গা করে নিলেন। দেশের জনপ্রিয় দল বিএনপির নীতি নির্ধারণী ফোরামের সদস্য হয়েছেন আগেই। অর্থাৎ, তিনি স্থায়ী কমিটির সদস্য এখন। কিন্তু, সবকিছুকে ছাপিয়ে যেয়ে দলকে ধরে রেখে যে ক’জন রাজনীতিক বিএনপির মত সত্যিকার অর্থেই বুর্জুয়া দলের মধ্যে আছেন, সেখানে নজরুল ইসলাম খান খানিকটা বেমানান হলেও তিনি যেন হীরার মত করেই বিএনপির তাঁবুতে জ্বলজ্বল করেন !

 

নজরুল ইসলাম খান জামালপুর জেলার ইসলামপুর থানাধীন কুলকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বয়স বাড়ছে। বিদেশ ভ্রমণ করবার মধ্য দিয়ে মাঝেমাঝে নিজের মনকে হালকা করেন, রঙ্গীন করেন, অতঃপর নতুন কিছু করবার জন্য একটি শক্ত নিয়ত করে দেশে ফিরে আসেন। সবকিছু নিজের মত করে হয় না, তাই আবারও কিছুদিন পর হতাশ হয়ে পড়েন। তখন সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভারত কিংবা নেপালের মত দেশগুলোয় যেয়ে একাকীত্বে ক’দিন কাটিয়ে আসেন। শরীরটা তাঁর ভাল যাচ্ছে না, তাও অনেক দিন হল।

 

নজরুল ইসলাম খান ১৯৭০-এর দশকে শ্রমিক আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ১৯৭০ সালে তিনি তৎকালীন পাকিস্তান মেশিন টুলস কারখানার (বর্তমান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরী)  শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কালে ১৯৭১ সালের মার্চে গাজীপুরের জয়দেবপুরে সর্বদলীয় মুক্তিসংগ্রাম পরিষদ গঠিত হলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের  আজকের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক আহ্বায়ক ও তিনি কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

 

নজরুল ইসলাম খানের রাজনীতির একটি বিশেষ দিক আছে। তিনি কখনো সাংসদ হতে চান নি। কেন চান নি– তা নিয়ে গবেষণার হেতু আছে ! তিনি কি বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় নিজেকে সক্রিয় সঙ্গী হিসাবে দেখতে চান না, নাকি দলের সাংগঠনিক দিক নিয়েই থাকতে স্বস্তিতে থাকেন ?  গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, তিনি নির্বাচন পরিচালনা করা, দলের বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ নিয়ে  দাফতরিক দিক দেখা, সময়ে সময়ে দলের মুখপাত্র হয়ে জাতীয় রাজনীতি করা, এসবের মধ্যেই নিজেকে রাখতে তিনি পছন্দ করেন। অথচ, একজন নজরুল ইসলাম খানকে যদি মহান জাতীয় সংসদে পাওয়া যেত, বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক পর্যায়ে নিশ্চিত আলোচনাকরত  তুখোড় বক্তা বা পারলামেন্টেরিয়ান হয়ে তাঁকে ভিন্ন ভুমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখা যেত। এই সুযোগটি বাংলাদেশ পায় নি, পেল না। তাঁর নিজের দলের শীর্ষ নেতারা এমন কিছু নিয়ে কখনো ভেবেছে কিনা ! তা নিয়েও গবেষণার দিক আছে।

 

নজরুল ইসলাম খানের  ব্যক্তিত্ব, বেশভূষ, কথা বলার আদল , রাজনৈতিক জানাশোনা এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক দূতিয়ালী তাঁকে মহান রাজনৈতিক নেতা হিসাবে দাঁড় করায়। সাংসদ না হয়েও রাজনীতির এই আভিজাত্যময় সত্তাকে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে দিয়েছে। নজরুল ইসলাম খান, রাজনৈতিক গবেষক হয়েই হয়তো মুক্তির যুদ্ধ করতে চান। ১৯৭১ সালে করেছিলেন, দেশের জন্য, আর এখন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য…

 

৮৬ 

শফিকুল গাণি স্বপন 

 

পিতা মশিউর রহমান যাদু মিয়া। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা  বা জায়গা পেতে এমন পরিচয় থাকলে কিছুই তো লাগে না। কিন্তু, পিতার রাজনীতির হুবুহু অনুসরণে থেকে একজন শফিকুল গাণি স্বপনের রাজনৈতিক পথচলা নির্ধারিত ছিল, এমন দাবীর প্রেক্ষিতে গবেষক দল বলছে, ‘না’ আবার ‘হ্যাঁ’।

জনাব স্বপন, বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে সেই নাম, যেখান থেকে প্রজন্ম তাঁর সম্পর্কে আবার জেনে, শুনে, বুঝে নতুন ধারার আবহে পুরোনো রাজনীতিকে আলিঙ্গন করতে পারে। বরং আজকের বাংলাদেশে যাদু মিয়া, স্বপন কিংবা তাঁদের তৃতীয় জেনারেশন জেবেল রহমান গাণি ( স্বপন পুত্র)কে নিয়ে আলাদা করে ভাবনার জায়গায় গেলেই দেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সাথে আরেকটি আওয়ামী লীগের লড়াই চালু হতে পারে বলে মনে করবার সুযোগ আছে। সেটি বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি – ন্যাপ ( ভাসানী-যাদু- স্বপন- জেবেল) এর মাধ্যমে। বরং, দেশে যে জোটবদ্ধ রাজনীতির সংস্কৃতি চালু হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল– বিএনপি কিংবা হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের তৈরি করা রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি ‘ন্যাপ’ নেতৃত্বাধীন থেকে দুই বলয়ের রাজনীতিকে সক্রিয় রাখতে পারে। সারাবিশ্বেই সাধারণত গণতান্ত্রিক শাসনরীতিতে দুইটি দল বা জোটের রাজনীতির প্রভাব রয়েছে। সেখানে বর্তমান বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঠিক পেরে ওঠার রাজনীতিতে নেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। হ্যাঁ, তাঁরা মোটামোটি জনপ্রিয়, কিন্তু আদর্শিক রাজনীতি থেকে দূরে সুরে যাওয়াই দলটির ভবিষ্যৎ নিয়ে অন্ধকার সীমানা দৃষ্টিগোচরে আসছে বলে অনুমিত হয়।

 

এদিকে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর যে বিএনপি গঠন হয়েছিল, সেই বিএনপির জন্য জিয়া-যাদু মিয়ার চুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের আলোকে এককাট্টা করেছিল তাঁদেরকে। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও যাদু মিয়ার  ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি – ‘ন্যাপ’ সাময়িকভাবে বিলুপ্ত করে তাঁরা বিএনপিকে সমর্থন দিয়ে ফেলে। এমন কি দলীয় প্রতীক ধানের শীষ পর্যন্ত বিএনপির কাছে দিয়ে দেয়া হয়।   ফলশ্রুতিতে দলটি ক্ষমতায় ছিল এবং অল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়ে যায়। জিয়াউর রহমানের হত্যা এবং আরেক সেনা ব্যক্তিত্ব হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে নিয়ে নিলে রাজনৈতিক সমীকরণে পরিবর্তন আসে। এরপরে এরশাদ পতনের পর পরবর্তী তে জিয়া-যাদুর দলের সুবিধা ভোগ করেছে  বিএনপির পরবর্তী নেতৃত্ব তথা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু, বারংবার করে ক্ষমতায় আসা ও টিকে থাকার উদ্ভট সিদ্ধান্ত, দলের মধ্যে গণতন্ত্র না থাকা, সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সাথে সখ্যতা দলটিকে আদর্শিক রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। জনস্বার্থ সংরক্ষণের রাজনীতি না করাটাও তাঁদের রাজনীতির রাস্তাটিকে সরু করে ফেলে। এমতাবস্থায়  বেগম জিয়াদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা, এরশাদ এর দলের  দুর্বল হয়ে পড়া—- মওলানা ভাসানীর দলটাই এই বলয়ের রাজনীতির অভিভাবক  সংগঠন হয়ে ভবিষ্যতে ধরা দিলে এই প্রজন্ম কিংবা আগামী প্রজন্ম লুফে নিতে পারে। তাঁরা আওয়ামী লীগ ও ন্যাপের মধ্যে আদর্শ খুঁজে নিয়ে দুইটি বলয়ের সমর্থক হতে পারে। যাদু মিয়া যেমন বুদ্ধি করে একজন সেনা শাসক কে সামনে রেখে রাজনীতি করতে চেয়েছিলেন, তিনি জানতেন বিএনপিকে নিয়ে সম্ভব, আবার অসম্ভবও। কারণ, অসম্ভবের দিক না থাকলে কেন তিনি দলের গঠনতন্ত্রে লিখলেন যে, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ন্যাপ উজ্জীবিত হতে পারবে ! 

 

অন্যদিকে রাজনৈতিক পালাবদলে জিয়ার পরেই অপর সেনাশাসক হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় চলে গেলে যাদু মিয়া পুত্র শফিকুল গাণি স্বপনও যেন পিতার পথে হাটলেন। তিনি যোগ দিলেন জাতীয় পার্টিতে। মশিউর রহমান যাদু মিয়া বিএনপির শাসনামলে সিনিয়র মন্ত্রী হলেন, প্রধানমন্ত্রী হলেন, ঠিক একইভাবে শাফিকুল গাণি স্বপনও এরশাদ সরকারের মন্ত্রী হলেন।

 

যুগের পরিক্রমায় শফিকুল গাণি স্বপন দেখতে পেলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল পারিবারিক রাজনীতির উত্তরসূরীদের কাছে জিম্মি। তাই এরশাদ সরকারের পতনের পর বিএনপিতে যোগ দিয়েও যেন হতাশ হলেন। দেখতে পেলেন, পিতা মশিউর রহমান যাদু মিয়াকে তাও তো সাবেক সেনা শাসক জিয়া তর্ক সাপেক্ষে রাজনৈতিক মূল্যায়নের জায়গায় রেখেছিলেন, কিন্তু বিএনপি এতটাই বেগম জিয়া ও তারেক রহমান নির্ভর দল হয়ে পড়েছে, যেখানে তাঁর পরিবারের চাওয়া- পাওয়াটাই মুখ্য। ঠিক সে কারণে রাজনীতির রহস্যপুরুষ সিরাজুল আলম খান, আসম আব্দুর রব কে নিয়ে নতুন একটি রাজনৈতিক মহাপরিকল্পনা করেও পিছু হটলেন শফিকুল গাণি  স্বপন। তখন তিনি একটি অর্থবহ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিলেন এবং ভাবলেন, একটা সময় বাংলাদেশের মানুষ একজন জিয়াকে নয়, এরশাদকে নয়, মানুষ রাজনৈতিক পছন্দে দুইজন ব্যক্তিকে অসীম শ্রদ্ধার জায়গায় রাখবে। একজন হলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। অন্যজন, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে। তাই তিনি পিতার অভিনব আইন নিয়ে মেতে উঠলেন। আবারো বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- ন্যাপ কে পুনর্জন্ম দিলেন। খুব সম্ভবত হয়তো তিনি বলে গিয়েছেন কিনা তা জানা যায় না। তবে নিশ্চিতাকারে আগামী বিশ কিংবা পঁচিশ বছর( ২০২৫-২০৩২) পরে আওয়ামী লীগের সাথে আওয়ামী ন্যাপের মধ্যকার বনেদী আসন্ন লড়াই হিসাবে তিনি দেখেছিলেন, তা নিয়ে গবেষণা করবার অযুত দিক সামনে চলে আসে। যে দায়িত্ব তাঁর মৃত্যুর পর পুত্র জেবেল রহমান গাণির ওপর বর্তায় বলে প্রমাণিত দূরদৃষ্টি সতর্ক করে। 

শাফিকুল গাণি স্বপন নীলফামারী জেলার সন্তান।  মাতার নাম সাবেরা রহমান। দাম্পত্য সঙ্গী হিসাবে যাকে পেয়েছিলেন, তিনিও বিদায় নিয়েছেন। পৃথিবী থেকে।  নাজহাত গাণি শবনামও একজন স্বপন এর মৃত্যুর কিছুদিন পরেই গ্রহান্তরীত হন।  জনাব স্বপন রংপুর জিলা স্কুলে পড়েছেন। কলেজ ছিল ঢাকার নটরডেম। লন্ডনের কুইন ম্যারি ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি অর্থনীতির ওপর বিএসসি করেন।  জীবদ্দশায় ডিমলা- ডোমার তথা নীলফামারি-১ আসন থেকে সাংসদ হয়েছিলেন। তিনি উইকলি হলিডের সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। এছাড়াও বড় ধরনের ক্রীড়া সংগঠক ছিলেন। ১৯৮৬ সালের ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের গভর্নিং বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স ছিল, যা অনুমোদিত হয় ইউনাইটেড কিংডম হতে।

 

শফিকুল গাণি স্বপন এর মাঝে উন্নত নেতৃত্ব ছিল, ছিল রাজনৈতিক পর্যায়ে উচ্চ মার্গের বৈশ্বিক ভাবনা। তিনি উপমহাদেশের খ্যাতনামা রাজনীতিকদের পরম প্রিয় সত্তা ছিলেন। তাঁর চরিত্রের সবচাইতে বড় দিক, তিনি মনে প্রাণে আধুনিক ছিলেন। কাউকে ‘না’ বলতে পারতেন না। মানুষের জন্য করতে চাইতেন। ভীষণ স্টাইলিস্ট এই রাজনীতিক স্বপ্নবাজ চরিত্রের ছিলেন। নৈতিকতা বিরুদ্ধ কোনো কাজে তাঁকে দেখা যায় নাই। পারিবারিক রাজনীতির অনেকেই তাঁর মনের মত করে না চললেও, তিনি হতাশ হন নাই। বিরোধ পছন্দ করতেন না।  অল্প বয়সে তিনি দুনিয়া ছাড়তে বাধ্য হন। প্রজন্মের কাছে তাঁর আহবান একটাই ছিল, তা হল, বাংলাদেশের স্বার্থ। তিনি বঙ্গবন্ধুকে যেমন সম্মান করে গেছেন, সাথে বলেছেন, তোমরা মওলানা ভাসানী কিংবা আমার বাবা যাদু মিয়াকেও মনে রাখতে পারো। গভীর বিশ্লেষনে ও গবেষণায় উঠে আসে, জাতীয়তাবাদ ও খানিকটা বাম ধারার রাজনীতির সংমিশ্রণে রাজনৈতিক ঐতিহাসিকতার প্রশ্নে আওয়ামী লীগের আজকের প্রজন্মের সাথে পুরোপুরি লড়াইটা করবার সামর্থ্যই ছিল শফিকুল গাণি স্বপনের। শারীরিক অসুস্থতা, তাঁকে অল্প বয়সে পৃথিবী ছাড়তে বাধ্য করে। কিন্তু,ইতিহাসের পাতায় তাঁকে আড়াল করে অর্থবহ কিছু রচিত হয় না, হতে পারে না। এমন বোধে তাঁর উত্তরসূরীরা বসবাস করে তো ?

সুপ্রিয় পাঠক,

বাংলাদেশের সর্বযুগের সেরা রাজনীতিকদের তালিকা( ১০০) প্রকাশে কেএইচএন রিসার্চ টিম কাজ করে যাচ্ছে। পরবর্তী প্রতিবেদনে ৮৫ হতে ৮১ নং তালিকায় যারা থাকছেন, তা প্রকাশ করা হবে। সে পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকুন।

 

আপনাদের মতামত এবং জায়গা পাওয়া  কারো সম্পর্কে তথ্য দিতে চাইলে নিম্নলিখিত ই মেইলে পাঠান।

 

 

5 Comments

  1. Alex TM
    April 1, 2015 at 20:27
    Reply

    Dolorum nascetur quibusdam bibendum nesciunt torquent vehicula, nostra? Nisl? Excepteur repellat provident, laboriosam! Nullam vel.

    • Alex TM
      April 1, 2015 at 20:28
      Reply

      Corporis quasi dicta voluptates, rerum vero eos quaerat, quo aliqua voluptates suspendisse quod tempus! Interdum.

      • Alex TM
        April 1, 2015 at 20:28
        Reply

        Egestas molestias erat impedit blanditiis quam, proident rutrum iste? Illum? Aenean proin. Nostrum pretium, commodi.

Leave a Reply

Close
Close